খুলনা থেকে কৌশলে ডেকে নিয়ে দুই নার্সারি ব্যবসায়ীকে আটকে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করার ঘটনার মূল হোতাসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব-১৩) একটি দল। এ দুজনসহ আগে গ্রেফতার হওয়া সবাই আন্তজেলা অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের সদস্য।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) সকালে রংপুরে র্যাব-১৩-এর অস্থায়ী সদর দফতরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কমান্ডার রেজা আহাম্মেদ ফেরদৌস।
গ্রেফতার ইছা মিয়াকে গাইবান্ধা জেলার ধাপেরহাট এবং তার সহযোগী আব্দুল লতিফকে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা নার্সারি ব্যবসায়ীদের কৌশলে রংপুরে ডেকে নিয়ে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।
র্যাব-১৩ অধিনায়ক বলেন, খুলনার খালিশপুর গোয়ালখালী এলাকার খন্দকার শাহাবুল ইসলাম বিশুদ্ধ অ্যাগ্রো নার্সারির মালিক। সম্প্রতি মুক্তিপণ দাবিকারী চক্রের সদস্য ইছা মিয়া ও আব্দুল লতিফ ছদ্মনামে চারা কেনার জন্য সেখানে যান। পরিদর্শনে গিয়ে তারা অনেক চারা কিনবেন বলে আশ্বাস দিয়ে মাটি পরীক্ষার জন্য ওই নার্সারির মালিককে রংপুরে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে খুলনা থেকে বাসযোগে গত বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) খন্দকার শাহাবুল ইসলাম (৫৭) ও ফারুক হোসেন (৩২) রংপুরের মডার্ন এলাকায় আসে। সেখান থেকে তাদের দুজনকে মোটরসাইকেলে গঙ্গাচড়া উপজেলার ফুলবাড়ির চওড়া গ্রামের জনৈক রুহুল আমিনের বাড়িতে নিয়ে যায় প্রতারক চক্রটির সদস্যরা। সেখানে একটি কক্ষে চোখ ও হাত বেঁধে আটকে রেখে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অন্যথায় তাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় নার্সারি ব্যবসায়ীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। একপর্যায়ে বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করে চক্রটি। বিষয়টি স্বজনদের মাধ্যমে র্যাব-১৩ জানতে পেরে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) এই চক্রের মূল হোতা ইছা মিয়াকে গাইবান্ধা জেলার ধাপেরহাট এবং তার সহযোগী আব্দুল লতিফকে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গ্রেফতার করে। তবে এখনো রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চললেও বলে জানান র্যাব-১৩ অধিনায়ক কমান্ডার রেজা আহাম্মেদ ফেরদৌস।
এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি ওই চক্রের বাচ্চু চন্দ্র (৫২), স্বপন রায় (২২) ও খাদিজা বেগমকে (৩৭) গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিত ইউনিয়নের ফুলবাড়ীর চওড়া গ্রাম থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে দেশীয় পিস্তল, ১ রাউন্ড গুলি, ৩টি দেশীয় অস্ত্র ও একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়। এ সময় দুই অপহৃত নার্সারি ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে র্যাব।
এই প্রতারক চক্রটি মূলত অনলাইনে ব্যবসা করে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করে আসছে। এর আগে এই চক্রটি রংপুর অঞ্চলে অন্তত এমন দশটি ঘটনা ঘটিয়েছে।