সিএনএমঃ
জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ভাষণের সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কোন মুখে এই কথা বলেন যে যুদ্ধ চাই না, নিষেধাজ্ঞা চাই না। আপনি যে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন, গণতন্ত্র চাওয়ায় সেই দেশের মানুষদের আপনি হত্যা করছেন।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।
মুন্সিগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে যুবদল কর্মী শহিদুল ইসলাম (শাওন) নিহতের প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেন। ভাষণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ বা একতরফা জবরদস্তিমূলক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার মতো বৈরী পন্থা কখনো কোনো জাতির মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। এ বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, তারা জাতিসংঘে গিয়ে বলে যে যুদ্ধ চাই না, তারা বলে নিষেধাজ্ঞা চাই না— কোন মুখে এই কথা বলেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘যে দেশে আপনি বাস করেন, যে দেশের আপনি প্রতিনিধিত্ব করছেন, সেই দেশের মানুষদের আপনি হত্যা করছেন। তাদের একটিমাত্র অপরাধ তারা গণতন্ত্র চায়, তারা তাদের অধিকার ফিরে পেতে চায়, ভোটাধিকার পেতে চায়, বেঁচে থাকতে চায়, মানুষের মতো জীবনযাপন করতে চায়।’
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা আজকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছেন, পুলিশকে ব্যবহার করছেন, বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছেন, প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন, মিডিয়ার মুখ বন্ধ করে দিয়ে জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছেন।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘শুধু শাওন নয়, আন্দোলন শুরুর পরে আমাদের চার সন্তানের রক্ত নিয়েছেন শেখ হাসিনা। আজকে রক্ত ঝরিয়ে, হত্যা করে, ভয় দেখিয়ে, গুম করে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কিন্তু মানুষের যে অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে, এক শাওন, আবদুর রহিম, নুরে আলমের মৃত্যুতে সে অভ্যুত্থানকে দমন করা সম্ভব হবে না।’
সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, বন্দুকের গুলিতেই শহিদুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে সমাবেশে নিহত এই যুবদল কর্মীর বাবা ছোয়াব আলী বক্তব্য দেন। তাঁর কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁকে ভয় দেখানো হয়েছে। তুমি বল যে পেছন থেকে ইটের আঘাতে সে (শাওন) মারা গেছে, তুমি বল যে তাঁকে বিএনপির লোকেরাই মেরেছে। কিন্তু আমাদের কাছে পরিষ্কার ডকুমেন্ট আছে। তার ডেথ সার্টিফিকেটে ডাক্তারেরা পরিষ্কার করে বলেছেন, মৃত্যুর কারণ গুরুতর আঘাত, বন্দুকের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কাজেই মিথ্যাচার করবেন না। আজকে মিথ্যাচার করে, প্রতারণা করে জনগণকে বোকা বানিয়ে রেখেছেন। মানুষ আর তা সহ্য করতে রাজি নয়।’
বক্তব্যে ছোয়াব আলী বলেন, ‘কোন দেশে বাস করি, মৃত মানুষের নামে মামলা হয়। আমার ছেলেকে তারা গুলি কইরা মারছে, আবার মামলা দিছে।’ তিনি বলেন, বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ, এর যে কী বোঝা, তা যে কাঁধে নেয়, সে বোঝে। এ সময় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে দলের নেতা-কর্মীসহ সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান ও আবদুস সালাম, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল মাহমুদ প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন, সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম।