বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার (২৪ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ড. মোমেনের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক নতুন প্রতিনিধি গুইন লুইসকে। এ সময় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আবাসিক নতুন প্রতিনিধি জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের একটি চিঠি হস্তান্তর করে সাবেক আবাসিক প্রতিনিধির মিয়া সেপ্পোর স্থলাভিষিক্ত হন। ড. মোমেন নতুন প্রতিনিধিকে স্বাগত জানান। তিনি উন্নয়ন, শান্তি ও নারীর ক্ষমতায়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সাক্ষাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলমান রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি সংক্ষিপ্তভাবে সংকটের ঐতিহাসিক ও মূল পটভূমি তুলে ধরেন। মোমেন মানবিক সহায়তায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে ধন্যবাদ জানান। তিনি গত বছর বাংলাদেশ সরকার ও সংস্থাটির শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা- ইউএনএইচসিআরের মধ্যে হওয়া সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর ভাসানচরে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর কাজ শুরুর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ড. মোমেন লুইসকে বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বজায় রাখতে হবে। নতুন আবাসিক প্রতিনিধি উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
এ সময় তারা বিশ্বব্যাপী জলবায়ু অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েও আলোচনা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আরও শান্তিরক্ষী পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা জানান।
নতুন আবাসিক প্রতিনিধি লুইস আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, শান্তি বিনির্মাণ এবং মানবিক সহায়তায় প্রায় দুই যুগের কাছাকাছি সময় কাজ করেছেন।
জাতিতে আইরিশ লুইস ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা বিষয়ক পরিচালক এবং লেবাননে ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা বিষয়ক প্রোগ্রামের উপ-পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি জেনেভাতে জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) জরুরি বিভাগে গ্লোবাল ক্লাস্টার সমন্বয় বিভাগও পরিচালনা করেছেন। তিনি ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনেও কাজ করেছেন।
লুইস অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের অফিস এবং ইন্টারন্যাশনাল রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি), কসভোতে জাতিসংঘের মিশন এবং তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান ও আলবেনিয়ার বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার জন্যও কাজ করেছেন।
লুইস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ইউরোপীয় গবেষণায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনি সান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রিও অর্জন করেন। লুইস ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় দক্ষ।
এর আগে বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন মিয়া সেপ্পো। তিনি বর্তমানে জিম্বাবুয়েতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করছেন।