টাঙ্গাইলে অসময়ে যমুনা নদীসহ জেলার বিভিন্ন নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান, বাদামসহ মসল্লা জাতীয় বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। রোপণ করা বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন কৃষকরা। ফসল পরিপক্ক না হওয়ায় পানির নিচেই পচে নষ্ট হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার চরাঞ্চল বেষ্টিত গাবসারা, অর্জুনা, গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের নিচু এলাকায় ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
অকাল বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গোল চত্বর এলাকায় ১২০টি স্কিমের জমির ধানে যমুনা নদীর পানি প্রবেশ করেছে। এতে তলিয়ে গেছে ধান। কৃষকরা শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে পারছেন না।
জানা গেছে, ভারতের আসামের পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যার পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এতে কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে ঘরবাড়ি ভাঙনের পাশাপাশি তলিয়ে যাচ্ছে জমির ফসল। পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে ধান, বাদাম, তিল, তিশি, ধনিয়াসহ বিভিন্ন ফসল।
এদিকে যমুনার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। এতে গত এক সপ্তাহে ওই গ্রামের শতাধিক বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ভাটিতে কাকুয়া ইউনিয়নের চরপৌলী গ্রামটির অবস্থান। প্রতি বছর যমুনার পানি বৃদ্ধি এবং কমার সময় এই এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়।
ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের কৃষকরা বলেন, অসময়ে যমুনায় পানি বৃদ্ধিতে চরাঞ্চলের সব ফসল তলিয়ে গেছে। কাটার সময়ও পায়নি। আবার অপরিপক্ক ফসল কেটে কোনো লাভ নেই বরং কাটতে গেলে শ্রমিক খরচ হয়। তাই পানিতে পচে নষ্ট হচ্ছে বাদাম, রাঁধুনি সজ, তিল, কাউনসহ বিভিন্ন ফসল।
চরচিতুলিয়া এলাকার মোবারক হোসেন জানান, প্রায় ২০ বিঘা জমিতে ধনিয়া সজের আবাদ করেছিলাম। কিন্তু অসময়ের বন্যায় সব তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া অনেক কৃষকের জমির ফসল পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
কালিহাতী উপজেলার সরাতৈল ও বল্লভবাড়ি এলাকার কৃষক তোফাজ্জল, আক্কাস আলীসহ অনেকেই জানান, ধলেশ্বরীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জোকার সরাতৈল ও বল্লভবাড়ি এলাকায় প্রবেশ করে। গ্রামদুটিতে ব্যাপক পরিমাণ ধানের আবাদ হয়। ফলে শত শত একর ধানের ক্ষেতে পানি প্রবেশ করে তলিয়ে যায়। এতে কৃষকরা রাতের আঁধারে ধান কেটেও শেষ করতে পারেনি। অনেক ধান এখনো পানির নিচে রয়েছে।
ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হুমায়ুন কবির বলেন, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে কয়েকদিন ধরে। এতে উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলের নিচু এলাকার কিছু অংশের ফসলের জমিতে পানি প্রবেশ করেছে। এতে কৃষকের ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। বন্যার আগেই কৃষক তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করি।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জিয়াউর রহমান জানান, নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাতুলি ও কাতুয়া মসুল্লি গ্রামে ফসলি জমির ভাঙন শুরু হয়েছে। তবে ফসলের ক্ষতি হয়নি। এ ছাড়া উপজেলায় প্রায় ৮০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। বাকি ২০ ভাগ ধান কাটতে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে দ্রুত কাটার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর টাঙ্গাইলের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আহসানুল বাশার জানান, জেলায় ৮০ ভাগ ধান পেকে গেছে। ধান কাটাও প্রায় শেষের দিকে। পাকা ধানে পানি প্রবেশ করলে তেমন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।