দেশের উত্তরাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর মারিউপোলের নিয়ন্ত্রণ রুশ বাহিনীর হাতে ছেড়ে দিয়েছে ইউক্রেন। সোমবার শহরটির ইস্পাত কারখানা আজভস্তাল প্ল্যান্টে অবস্থান নেওয়া ইউক্রেনীয় সেনাসদস্যদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনীর মূল কমান্ড।
সোমবার সন্ধ্যায় ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফের দপ্তর থেকে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘মারিউপোলের আজভস্তাল এলাকায় অবস্থান নেওয়া বেসামরিক লোকজনের নিরপত্তা নিশ্চিত করতে মারিউপোল ইউনিটের সেনাসদস্যদের দায়িত্ব দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সেনা কমান্ড।’
মারিউপোল ইউনিটের সেনাসদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আজজভস্থালের সেনা সদস্যরা সেই মিশন সম্পূর্ণ করেছে। সাধারণ জনগণকে রক্ষাকারী এসব সেনারা আমাদের জাতীয় বীর।’
ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের শুরু থেকেই রুশ বাহিনীর কাছে কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল দেশটির উপকূলীয় শহর মারিউপোল। ইউক্রেনের যেসব অঞ্চলে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে রুশ বাহিনীর সবচেয়ে বেশি সংঘাত হয়েছে, সেসবের মধ্যে আজভ সাগরের তীরবর্তী এই শহরটি ছিল অন্যতম।
এপ্রিল মাসেই মারিউপোল শহরের অধিকাংশ এলাকা দখলে নিয়ে এসেছিল রুশ বাহিনী। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল শহরটির প্রান্তে অবস্থিত আজভস্থাল ইস্পাত কারখানা। সাবেক সোভিয়েত আমলে প্রায় ৫ মাইল এলাকাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত এই কারখানাটি ছিল ইউক্রেনীয় বাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি।
এদিকে যুদ্ধের তীব্রতার কারণে শহরটির অনেক বেসামরিক মানুষ মারিউপোল ত্যাগ করে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে সরে যেতেও পারছিলেন না। তাদের একাংশও আশ্রয় নিয়েছিলেন সেই কারখানার ভূগর্ভস্থ ঘরগুলোতে।
এপ্রিল থেকে কয়েক সপ্তাহ ধরে রুশ সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ হয় ইউক্রেনীয় বাহিনীর। এক পর্যায়ে গোটা কারখানা উড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই যুদ্ধে রুশ বাহিনীর অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার রমজান কাদিরভ; পরে পুতিনের নির্দেশে সেই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন তিনি।
আজভস্তালে অবস্থান নেওয়া বেসামরিকদের এপ্রিলের শেষ থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, গত সপ্তাহে তা শেষও হয়েছে। এবার সেনা সদস্যদেরও প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো।
চিফ অব স্টাফের দপ্তর থেকে দেওয়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আজভস্তালের ওই ইস্পাত কারখানায় অবস্থান নিয়েছিলেন ৩ শতাধিক সেনা। তাদের মধ্যে বর্তমানে জীবিত আছেন ২৬৩ জন।
জীবীত এই সেনা সদস্যদের মধ্যে ৫৩ জনকে আহত অবস্থায় মারিউপোলের পার্শ্ববর্তী শহর নোভোয়াজোভস্কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই শহরটি বর্তমানে রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বাকি ২১১ জনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওলেনিভকা শহরে। এই শহরটি নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে রয়েছে ইউক্রেনের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে।
আজভস্তালের ইউক্রেনীয় সেনা সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমাদের বীরেরা অবশেষে ঘরে ফিরে আসছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী, জাতিসংঘ, রেড ক্রসসহ যাদের প্রচেষ্টায় এটি সম্ভব হয়েছে, তাদের সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
সূত্র: রয়টার্স, আরটি