উত্তর কোরিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ মে) দেশটি প্রথমবারের মতো করোনার প্রাদুর্ভাবের কথা নিশ্চিত করে। এরপরই দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছে পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষমতাসীন কিম জং উনের প্রশাসন। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়া প্রথমবারের মতো করোনার প্রাদুর্ভাবের কথা নিশ্চিত করে এটিকে ‘গুরুতর জাতীয় জরুরি অবস্থা’ বলে অভিহিত করেছে। এরপরই সমগ্র উত্তর কোরিয়াজুড়ে লকডাউন জারি করে দেশটির সরকার।
এছাড়া রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে এক রোগীর শরীরে করোনাভাইরাসের অতিসংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের খোঁজ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।
বিশ্বজুড়ে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা মহামারি চললেও বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়া এতোদিন দাবি করে আসছিল তাদের দেশে কেউ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়নি।
এমনকি দেশটি কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে এবং কোভিডবিধি মেনে সীমানা বন্ধ করতেও অস্বীকৃতি জানায়। আর তাই করোনা সংক্রমণের প্রথম এই প্রকাশ্য স্বীকৃতি সম্ভাব্য বড় একটি সংকটকেই সামনে আনছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ মাস পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ বা শনাক্তের কোনো ঘটনাই রিপোর্ট করা হয়নি এবং এছাড়া দেশটির জনগণের করোনা টিকা নেওয়ার কোনো আনুষ্ঠানিক রেকর্ডও নেই।
করোনার অতিসংক্রামক ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের একটি উপ-ভ্যারিয়েন্টে শনাক্ত হওয়া তথ্য উল্লেখ করে উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে গত দুই বছর এবং তিন মাস ধরে নিরাপদে রাখার পর দেশে সবচেয়ে বড় জরুরি ঘটনা ঘটেছে।’
প্রতিবেদনে এই সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, পিয়ংইয়ংয়ের বাসিন্দারা করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রামিত হয়েছেন। তবে ঠিক কতজন ভাইরাসের অতিসংক্রামক এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন বা সংক্রমণের সম্ভাব্য উৎস কী, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো দেয়নি কেসিএনএ। তবে এতে বলা হয়, গত ৮ মে আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার সময় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন করোনাভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাবের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করতে ওয়ার্কার্স পার্টির একটি বৈঠকের সভাপতিত্ব করছিলেন।
কেসিএনএ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে দেশের সকল শহর ও কাউন্টিগুলোকে ‘কঠোরভাবে লকডাউন’ জারির এবং জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাগুলোকে সচল করার নির্দেশ দেনকিম জং উন। এছাড়া রাষ্ট্রীয় মহামারি প্রতিরোধের কর্মকাণ্ড সর্বোচ্চ জরুরি মহামারি প্রতিরোধ ব্যবস্থায় রূপান্তর করা হবে বলেও জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় এই সংবাদমাধ্যমটি।
উত্তর কোরিয়া অবশ্য আগে কখনো দেশে একটিও করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত না করলেও দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তা নিয়ে বরাবরই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বিশেষত প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর পিয়ংইয়ংয়ের দাবি নিয়ে সন্দেহ আরও প্রকট হয়।
অবশ্য ২০২০ সালের শুরুতে মহামারি শুরু হওয়ার পর কঠোর লকডাউন, সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়াসহ বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ নিয়েছিল কিম জং উনের প্রশাসন। সেই বছরের জুলাই মাসে জরুরি অবস্থা জারির পর আন্ত-কোরিয়ান সীমান্তের কাছে কায়েসোং-এ তিন সপ্তাহের জন্য লকডাউন আরোপ করেছিলেন কিম।
মূলত ২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় চলে যাওয়া এক ব্যক্তি করোনার উপসর্গ নিয়ে ফের উত্তরে ফিরে আসার পর ওই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন উত্তর কোরীয় নেতা।