শ্রীলঙ্কায় এ সপ্তাহেই নতুন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা গঠন করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসে। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে থেকেই প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা হবে বলেও জানান তিনি। এছাড়া সংসদের হাতে আরও ক্ষমতা বাড়াবার ঘোষণাও দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
বুধবার (১২ মে) এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজাপাকসে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং সেই সঙ্গে স্থগিত সরকারের কার্যাবলী পরিচালনায় নতুন সরকার গঠনে আমি পদক্ষেপ নিচ্ছি।
এদিকে অগ্নিগর্ভ শ্রীলঙ্কায় নতুন সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছে বিক্ষোভকারী ও প্রধান একটি বাণিজ্য গোষ্ঠী। সোমবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের পদত্যাগ ও দিনভর সহিংসতায় আটজন নিহত হওয়ার পরেরদিন মঙ্গলবারও রোষের শিকার হতে হয়েছে সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের। এদিন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে সহিংসতা বন্ধ করে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার নতুন করে কোনো সহিংসতার খবর না পাওয়া গেলেও শ্রীলঙ্কাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এদিন কলম্বোর পথে পথে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে, সম্পদ বিনষ্টকারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তবে দেশটির প্রতিরক্ষা প্রধান একে ভিত্তিহীন খবর আখ্যা দিয়ে সাফ জানিয়েছেন, কোনোভাবেই তারা জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে না। সেনাঅভ্যুত্থানের গুঞ্জন শোনা গেলেও তা নাকচ করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী।
স্বাধীনতার পর থেকে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকছে শ্রীলঙ্কা। বিদেশি মুদ্রার মারাত্মক ঘাটতির কারণে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিও বন্ধ হয়ে আছে। জ্বালানি, রান্নার গ্যাস ও টানা বিদ্যুৎ সঙ্কটে লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পর সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। তারা এসব সঙ্কটের জন্য কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে সরকারের পদত্যাগ দাবি করতে থাকে। মাসখানেরও বেশি সময় ধরে চলা এ প্রতিবাদ অনেকাংশেই শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকায় গত শুক্রবার দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করে সরকার। সোমবার ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের শিবিরে হামলা করলে জনতার ধৈর্য্যরে বাধ ভেঙে যায়। এত দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আটজন নিহত ও ২০০ জনেরও বেশি আহত হয়।
সহিংসতা শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। দেশটির মন্ত্রিসভার সব সদস্যও পদত্যাগ করেন। এতে শ্রীলঙ্কার একটি ঐকমত্যের সরকার গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া পদত্যাগের দাবিতে অনড়। মঙ্গলবারও তারা সরকারি দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। কেউ যেন দেশত্যাগ না করতে পারে, সে জন্য বুধবার তারা বিমানবন্দরে অবস্থান নিয়েছে। বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দেশজুড়ে কারফিউ জারি ছিল।
সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা শ্রীলঙ্কার মোরাতুয়ার মেয়র সালমান লাল ফার্নান্দো এবং এমপি সনাৎ নিশান্ত, রমেশ পাথিরানা, মাহিপালা হেরাথ, থিসা কুত্তিয়ারাচ্চি ও নিমল লাঞ্জার সরকারি বাসভবনও পুড়িয়ে দিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে যারা শ্যীলঙ্কার মন্ত্রী-এমপিদের বাড়িতে আগুন দিয়েছেন, তাদের ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সূত্র: আল জাজিরা