কুমিল্লার তিতাসের ভিটিকান্দি ইউনিয়নের জগতপুরস্থ ন্যাশনাল ব্রিকস মেনুফ্যাকচার এর অংশীদারদের মাঝে দেনা-পাওনার হিসাব নিয়ে দ্বন্দ্বের ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করে ব্যাক্তি স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে ব্রিকস ফিল্ডের ইট লুটপাটের মিথ্যা অভিযোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন অংশীদার মো. সামছুল হক মোল্লা।
সামছুল হক মোল্লা অভিযোগ তুলে বলেন, ২০১২সালে এই ব্রিক ফিল্ডটি ৮জন পার্টনার নিয়ে চালু করা হয়। পরে ২০১৫ সালে ব্রিক ফিল্ডের চারজন পার্টনার কে হিসাব নিকাশ বুজিয়ে দিয়ে তাদেরকে বাদ দেয়া হয় এবং পূনরায় আবুল হোসেন মোল্লা, নজরুল ইসলাম, জামাল হোসেন ও আমি সামছুল হক মোল্লা পার্টনার হয়ে ব্রিকস ফিল্ড চালু করি।
এই ব্রিকস ফিল্ডে আমার নয় কানি জমি আছে এবং ভাটাটির শুরুতে আমি ২৫ লাখ টাকা দিয়ে পার্টনার হয়েছি। কিন্তু আবু মোল্লা বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে আমাকে কোনো হিসাব দেয়নি। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে সব পার্টনারদের দুরে সরিয়ে একক ভাবে তিনি ব্যবসা করে গেছেন। এবিষয় গুলো নিয়ে পূর্বে বহুবার তিতাস থানায় অভিযোগ দেয়া হয় এবং সকল পার্টনারদের কে নিয়ে সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয় পুলিশ।
আবু মোল্লার ক্ষমতার কাছে ব্যবসার অন্য সব পার্টনার অসহায় ছিল অনেকটা। ক্ষমতার পালাবদলে বর্তমানে বাড়িঘর ব্যবসা বানিজ্য সব ছেড়ে পরিবারের লোকজন নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন আবু মোল্লা। বর্তমানে তিনি না থাকায় ব্রিকস ফিল্ডে পরে থাকা ইটের হিসাব নিকাশ করে আমরা তিন পার্টনার মিলে ব্রিক ফিল্ডটি চালু করি এবং ব্রিকস ফিল্ডের অন্যান্য পার্টনারগন ব্রিক ফিল্ডটি পরিচালনার জন্য আমাকে দায়িত্ব বুজিয়ে দেয়।
তার সুবাধে আমি ভাউচারের মাধ্যমে এন্ট্রি করে ব্রিকস ফিল্ডে থাকা ইটগুলো বিক্রি করে যাচ্ছি কিন্তু হঠাৎ আমার অন্যান্য পার্টনারগন নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার করতে আমার বিরুদ্ধে ব্রিকস ফিল্ডের ইট জোরপূর্বক লুটপাট করে বিক্রি করে ফেলতেছি এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলে নানা পাঁয়তারা শুরু করেন।
তারা নিজেরাই আমাকে পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন ব্রিকস ফিল্ডের। আমি এখন পর্যন্ত যে ইট গুলো বিক্রি করেছি তার সম্পূর্ন হিসাব রয়েছে আমার কাছে অন্যান্য পার্টনারগন সকলে একসাথে বসে হিসাব নিকাশ করুক এবং আমার পূর্বের দেনা-পাওনার বিষয়টিসহ মিমাংসা করে সমাধান দেওয়া হোক। একই সাথে আমার বিরুদ্ধে ইট লুটপাটের মিথ্যা অভিযোগ তুলে নাটকীয়তার মাধ্যমে যে অপপ্রচার শুরু করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
লুটপাটের অভিযোগের বিষয়ে সামছুল হক মোল্লার ছেলে জামান প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আমার বাবা একজন সৎ মানুষ। তিনি এ ব্রিকস ফিল্ডের একজন পার্টনার। তার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে জোরপূর্বক ইট লুটপাটের অভিযোগ তুলে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাদের সকলের প্রতি আমি নিন্দা জানাই। আমার বাবা চোরের মত রাতের আধারে ইট বিক্রি করতেছে না, দিনের বেলায় প্রকাশ্যে ব্যাবসায়ীক নিয়ম নীতি মেনেই রিসিটের মাধ্যমে ইট বিক্রি করছে। নজরুল ভাই, জামাল কাকা তারাই আমার বাবাকে ব্রিক ফিল্ড চালু করতে বলেছেন। এখন তারাই আবার নিজ ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে আমার বাবাকে হ্যায় প্রতিপন্ন করতে নতুন নাটকীয়তা শুরু করেছেন। তারা এসে বসুক আমরা সম্পূর্ণ হিসাব দিব কত টাকার ইট বিক্রি করেছি এখানে লুকোচুরির কিছু নেই।
বসে হিসাব নিকাশ করে সব কিছুর সমাধান দিয়ে যাক। নিজদের নায্য পাওনা টাকার হিসাবের ইট গুলোই এখনো ব্রিকস ফিল্ড থেকে বিক্রি করতে পারি নাই এখনো, তারই মধ্যে কোটি টাকার ইট লুটের মিথ্যা গল্প শোনাচ্ছে মানুষকে।
ইটভাটার অংশীদার মো. জামাল হোসেন বলেন, আমার সাথে ইট বিক্রির ব্যাপারে কোন কথা বলেনি সামছুল হক। তিনি নিজের মন মত সব করতেছেন, তাই আমরা বাধা দিচ্ছি হিসাব নিকাশ শেষ করে বেচা-কেনা করা হোক। আমি ইট লুটপাটের বিষয়ে সামসুল হক মোল্লার বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
ঘটনার বিষয়ে জানতে ইটভাটার আরেক অংশীদার নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার ভাই জহিরুল ইসলাম জানান, আমার ভাই বিদেশে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। আমি এবং জামাল মিয়া সামসু মোল্লার কাছে গিয়েছিলাম, সেখানে ইট বিক্রির বিষয়টি উঠে আসলে আমরা প্রস্তাব রাখি তিনজনের একটি যৌথ ব্যাংক একাউন্ট করে সেখানে ইট বিক্রির টাকা গুলো জমা থাকবে কিন্তু সামসু মোল্লা প্রথম রাজী হলেও পরে আর বিষয়টি পাত্তা দেয়নি। এখন সামসু মোল্লা আমাদের কিছু না জানিয়ে একাই ব্রিক ফিল্ডের ইট গুলো জোরপূর্বক লুটপাট করে বিক্রি করতেছে। আমরা থানায় তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
ব্রিকফিল্ডের মালিক আবুল হোসেন মোল্লার ছেলে এসহাক মোল্লা বলেন, পার্টনারদের বিষয়টি ২০২২ সালে থানায় বসে মিমাংসা করা হয়। সেখানে হিসাব নিকাশ শেষে জামাল কাকা ৭৫লাখ টাকা কোম্পানির কাছে পাওনাদার হয় ও নজরুল কাকা ৮৩লাখ টাকা দেনাদার হয় এবং সামসুল হক মোল্লা হিসাব নিকাশ বুজে নিয়ে ব্রিক ফিল্ডের পার্টনার থেকে চলে যায়। এখন আমরা এলাকায় না থাকায় সামছুল হক মোল্লা জোরপূর্বক দলবল নিয়ে আমাদের ব্রিকস ফিল্ডের ইটগুলো লুটপাট করে বিক্রি করে ফেলতেছে।
তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মামুনুর রশীদ বলেন, এটা পার্টনারদের বিষয় কারোরই কোন কাগজপত্র এখনো পর্যন্ত পাই নাই। অভিযোগ যে গুলো পেয়েছি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্রিকস ফিল্ডের থেকে ৪টি ট্রাক্টর ও একটি মিনি ট্রাক ভর্তি ইটের গাড়ি নেয়ার সময় এলাকাবাসী আটক করেছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে সেগুলো কে জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। তবে এবিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। সামাজিক ভাবে ব্রিকস ফিল্ডের পার্টনারদের মধ্যে মিমাংসার চেষ্টা চলছে শুনেছি।