রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে দীর্ঘমেয়াদী একটি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। তাদের দাবি, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়া জয়লাভ করলেও চলমান এই সংঘাত সেখানেই শেষ হবে না। বুধবার (১১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
মস্কো অবশ্য ইউক্রেনে তাদের এই আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করছে। এছাড়া যুদ্ধের শুরুতে পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড আক্রান্ত হলেও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল মনোযোগ এখন দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়।
বিবিসি বলছে, মার্কিন গোয়েন্দারা এমন এক সময়ে এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করলেন যখন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দেশটির যোদ্ধাদের সঙ্গে রুশ সেনাদের তীব্র লড়াই চলছে। মূলত রাশিয়া পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক এভ্রিল হেইনস স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মার্কিন সিনেট কমিটির শুনানিতে বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনও ‘ডনবাসের বাইরেও অন্য আরও লক্ষ্য অর্জনের’ ইচ্ছা পোষণ করছেন। কিন্তু নিজের এই ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং রাশিয়ার বর্তমান প্রচলিত সামরিক সক্ষমতার মধ্যে অমিলের সম্মুখীন’ হয়েছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, রাশিয়ায় মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ঘাটতি এবং জ্বালানির দাম আরও খারাপ হয়েছে। আর তাই ইউক্রেনকে দুর্বল করার জন্য রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ‘সম্ভবত’ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমর্থনের ওপর নির্ভর করছেন।
অবশ্য ইউক্রেন যুদ্ধ চলতে থাকায় রুশ প্রেসিডেন্ট ‘আরও কঠোর কোনো উপায়’ গ্রহণ করতে পারেন। যদিও প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার জন্য ‘অস্তিত্বের হুমকি’ অনুভব করলেই কেবল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে মস্কো।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক স্কট বেরিয়ার একই শুনানিতে বলেন, রুশ ও ইউক্রেনীয়রা ‘কিছুটা অচলাবস্থার মধ্যে’ রয়েছে।
বিবিসি বলছে, চলমান এই লড়াইয়ে ইউক্রেন তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ অঞ্চলের চারটি এলাকা রাশিয়ার কাছ থেকে পুনর্দখল করার দাবি করেছে কিয়েভ। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর দাবি, চেরকাসি টাইশকি, রুস্কি টাইশকি, রুবিঝনে এবং বায়রাক এলাকা রাশিয়ার সেনাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের দ্বিতীয় প্রধান শহর খারকিভ থেকে রুশ সেনাদের ক্রমান্বয়ে সরিয়ে দিচ্ছে দেশটির যোদ্ধারা। আর এটিই ইউক্রেনের সাফল্য। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে শহরটিতে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করা হয়েছে।
তবে সাফল্য অর্জনের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বেশ সাবধানী। তিনি বলেছেন, সাপ্তাহিক ভিত্তিকে এমনকি প্রতিদিনই রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে বিজয় আশা করে ইউক্রেনীয়দের অতিরিক্ত নৈতিক চাপের পরিবেশ তৈরি করা উচিত নয়।