পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বাংলা আকাদেমি’ পুরস্কার দেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। প্রতিবাদ হিসেবে ‘অন্নদাশঙ্কর’ সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের খাগড়াগড়ের লেখিকা ও গবেষক রত্না রশিদ বন্দোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমিকে চিঠি পাঠিয়ে লেখিকা তার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েও দিয়েছেন। পাশাপাশি ২০১৯ সালে পাওয়া ‘অন্নদাশঙ্কর’ সম্মানও তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন। লেখিকার এই সিদ্ধান্তে কবি ও সাহিত্যিক মহলে শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
এই বছর প্রথম বাংলা আকাদেমির নামাঙ্কিত ‘রিট্রিভার্সিপ’ পুরস্কার দেওয়া চালু হয়। সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজের পাশাপাশি যারা নিরলস সাহিত্য সাধনা করে চলেছেন তাদের পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলা আকাদেমি। তারা বাংলার বেশ কিছু প্রখ্যাত সাহিত্যিকের মতামত নিয়ে ‘কবিতা বিতান’ কাব্যগ্রন্থের জন্য প্রথম বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ’রিট্রিভার্সিপ’ পুরস্কার দেওয়ায় জন্য মনোনীত করেন।
সোমবার ২৫ শে বৈশাখে রাজ্য সরকার আয়োজিত ‘কবি প্রণাম’ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর বাংলা আকাদেমি ‘রিট্রিভার্সিপ’ পুরস্কার পাওয়ার কথা ঘোষণা করেন রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দবতরের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা আকাদেমি পুরস্কার পাওয়ার বিষটি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না লেখিকা ও গবেষক রত্না রশিদ বন্দোপাধ্যায়। তিনি ২০০৯ সালে ও ২০১৯ সালে আকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন। মুসলিম বিয়ের গানসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা রয়েছে তার। অজস্র প্রবন্ধ ও গল্প লেখিকা রত্নাদেবীর ঝুলিতে রয়েছে ৩০টি পুরস্কার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা আকাদেমির পুরস্কার পাওয়া নিয়ে মঙ্গলবার তিনি সংবাদ মাধ্যমের কাছেও ক্ষোভ উগড়ে দেন ।
তিনি বলেন, ‘যেভাবে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে তার একটা প্রতিবাদ দরকার।’ পাশাপাশি রত্নাদেবী আরও জানান, মমতা বন্দোপাধ্যায়ের লেখাগুলিকে তিনি সাহিত্য পদবাচ্য বলেই মনে করেন না। যারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিলেন তা নিয়েও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এই লেখিকা। এরপরেই তিনি জানিয়ে দেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আকাদেমি পুরস্কার দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে ২০১৯ সালে পাওয়া আকাদেমি পুরস্কারটি তিনি ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
অন্যদিকে একই কারণে সাহিত্য অকাদেমির বাংলা উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন লেখক এবং সম্পাদক অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস। বিবৃতি প্রকাশ করে অনাদি জানিয়েছেন, কলকাতায় রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর দিন কবিতাকে যে ভাবে অসম্মান করা হয়েছে, তাতে তিনি ‘বিরক্ত’। সেই কারণেই তিনি ইস্তফা দিয়েছেন।
আন্দামান থেকে অনাদি আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে বাংলা কবিতাকেই অসম্মান করেছে কলকাতা। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে রবীন্দ্রনাথকে বুকের মাঝে রেখেছি। তার কবিতা আমার কাছে দুর্মূল্য। সেই কবির জন্মদিনে যদি এমন পুরস্কার দেওয়া হয় কবিতার নাম করে, তা হলে তা সামগ্রিকভাবে কবিতাকেই অসম্মান করে। তারই প্রতিবাদে আমি সাহিত্য অকাদেমির বাংলা উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, আনন্দবাজার