ইউক্রেনের একটি জাদুঘরে বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে রাশিয়া। প্রাচীন এক কবির নামে উৎসর্গকৃত এই জাদুঘরটি বিধ্বস্ত হওয়ার তথ্যটি নিশ্চিত করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, এ ঘটনায় তিনি বাকরুদ্ধ।
রোববার (৮ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া ওই জাদুঘরটি ১৮ শতকের দার্শনিক এবং কবি হরিহোরি স্কোভোরোদার নামে উৎসর্গকৃত স্থাপনা।
পূর্ব ইউক্রেনের স্কোভোরোদিনিভকা গ্রামে চালানো রাশিয়ার রাতভর হামলার সময় নিক্ষিপ্ত গোলা জাদুঘরের ছাদে আঘাত করে। এতে জাদুঘর ভবনে আগুন ধরে যায় এবং সেখানে কর্মরত ৩৫ বছর বয়সী কাস্টোডিয়ান আহত হয়। অবশ্য খারকিভের আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ সিনেগুবভ বলেছেন, হামলার আশঙ্কায় নিরাপত্তার জন্য জাদুঘরের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসগুলো আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে শনিবার গভীর রাতে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘চলমান এই যুদ্ধের প্রতিটি দিনই রাশিয়ার সেনাবাহিনী এমন কিছু করেছে যা আমাকে বাকরুদ্ধ করে দেয়। এরপরের দিনও রুশ সেনারা আরও এমন কিছু করে যা আপনাকে আবারও একই অনুভূতি দেয়।’
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘জাদুঘরকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালানোর কথা সন্ত্রাসীরাও ভাবতে পারে না। কিন্তু এই ধরনের একটি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি।’
ইউক্রেনের কস্যাক বংশোদ্ভূত কবি হরিহোরি স্কোভোরোদা তার জীবনের শেষ বছরগুলো ইভানোভকা গ্রামে কাটিয়েছিলেন। যা পরবর্তীতে তার সম্মানে স্কোভোরোদিনিভকা নামকরণ করা হয়।
খারকিভের আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ সিনেগুবভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ‘চলতি বছর মহান এই দার্শনিকের ৩০০তম জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘হরিহোরি স্কোভোরোদা তার জীবনের শেষ বছরগুলো যেখানে কাটিয়েছিলেন এবং যেখানে তাকে সমাহিত করা হয়েছিল; দখলকারীরা হয়তো সেই জাদুঘরটি ধ্বংস করতে পারে। কিন্তু তারা আমাদের স্মৃতি ও মূল্যবোধকে ধ্বংস করতে পারবে না।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
মস্কো অবশ্য ইউক্রেনে তাদের এই আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করছে। রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করা এবং পশ্চিমাদের উস্কে দেওয়া রুশ-বিরোধী জাতীয়তাবাদ থেকে দেশটিকে মুক্ত করতেই এই অভিযান চলছে বলেও দাবি করেছে রাশিয়া।
প্রায় আড়াই মাস ধরে চলা এই সামরিক অভিযানে রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের সামরিক-বেসামরিক বহু অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উঠছে বেসামরিক প্রাণহানির অভিযোগও। যদিও সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করেই হামলা চলছে বলে বরাবরই দাবি করে আসছে মস্কো।