জুনে অনুষ্ঠেয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা বলছে বিএনপি। তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশনের অধীনে প্রথম কুমিল্লা সিটি নির্বাচন। তাই রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন কুসিক নির্বাচন। কারণ বিগত ১০ বছর ধরে এই সিটি বিএনপির দখলে। সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর থেকেই রাজত্ব করছেন বিএনপি নেতা মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। তবে এবারের নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা।
দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দলীয় ফোরামে আলাপ-আলোচনা করে আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। অবশ্য কেউ কেউ এও বলছেন, নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার আগের সিদ্ধান্তেই অনড় রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। বেশ আগে থেকেই বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে বিএনপি ইতোমধ্যে সাফ জানিয়ে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলেও এ কথা জানিয়েছে বিএনপি। সর্বশেষ গত রোববার তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা উসমান তুরানের সঙ্গে বৈঠক করেও একই কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। এরপর থেকেই উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে কোনো প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি দলটি। আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থানে রয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া মনিরুল হক সাক্কুকে মনোনয়ন দেওয়া হবে কি নাÑ তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে এবং পার্লামেন্ট বাতিল করা না হলে অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশের জনগণ ভোট দিতে পারবে না। সেই কারণে বিএনপির সিদ্ধান্ত এই সরকারের অধীনে কোনো প্রহসনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন বলতে বাংলাদেশে কোনো কিছু নেই। ইসি ও নির্বাচনের ওপর কোনো বিশ্বাস নেই। আসন্ন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়ে দলগতভাবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলীয়ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সবে মাত্র নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। যদি আলোচনা হয় তখন জানানো হবে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অতীতে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন যে রকম হয়েছে এখানেও তার পুনরাবৃত্তি হবে। নতুন কিছু এখানে হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচনে দলের পক্ষ থেকে কারও প্রতি সমর্থন থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সব ধরনের নির্বাচন বয়কট করেছি।
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ভাষ্য, বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ক্ষেত্রে অনড় রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
অন্যদিকে আলোচনায় থাকা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু। ইভিএমের কারণে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে মেয়র হয়েছিলেন মো. মনিরুল হক সাক্কু। দ্বিতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়েই তিনি জয়ী হন। দলীয় কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয় থাকায় গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তিনি সময়ের আলোকে বলেন, আমি দুইবারের মেয়র, আমারও কিছু ফলোয়ার আছে। বিএনপি নির্বাচনে না গেলেও জনগণ যদি আমাকে চায়, তা হলে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেব। দল অংশ নিলে মনোনয়ন চাইব। না পেলে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। আমি তো দলের বাইরে না। সাক্কু আরও বলেন, আমি বিজয়ী হলে সরকারের কোনো ক্ষতি হবে না। একজন মেয়র সরকারের কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার। তিনি মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী। কাউসার জামান সময়ের আলোকে বলেন, ‘নেতাকর্মীদের চাহিদার কারণে আমি নির্বাচন করতে চাই। নেতাকর্মীরাও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। আশা করি আমি মনোনয়ন পাব। আর সাক্কু সাহেব বিএনপির নামে ভাঙিয়ে মেয়র হয়েছেন। এবার সেই সুযোগ নেই। তিনি শেখ হাসিনাকে পা ধরে সালাম করেছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন।’