জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হয়েছেন কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে পড়াশোনা করা শ্রাবণের গ্রামের বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার চিংড়া গ্রামে। ছাত্রদলের নতুন এই সভাপতির বাবা ও তিন ভাই আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। পরিবারের অন্য সদস্য এবং স্থানীয় আত্মীয়স্বজনদের অধিকাংশই একই রাজনীতির অনুসারী। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়তে এসে তিনি জড়িয়ে যান ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে। এরপর নিজের ত্যাগ-দক্ষতা দিয়ে অর্জন করেছেন ছাত্রদলের সভাপতির পদ। গত কমিটিতেও সভাপতির দৌড়ে থেকে দ্বিতীয় হন তিনি। সভাপতির পদ পেয়েই মাকে ফোন করে সুখবরটি দিয়ে পরিবারের সবাইকে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান শ্রাবণ।
আন্দোলন সংগ্রাম, পরিবার, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনসহ নানা বিষয়ে ছাত্রদলের এই নবনিযুক্ত সভাপতির সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সময়ের আলোর স্টাফ রিপোর্টার রফিক রাফি।
ছাত্রদলের নবনিযুক্ত সভাপতি বলেন, পরিবারের সদস্যদের যেন সমস্যা না হয় সেজন্য গত ১০ বছর ধরে বাড়ি যাই না। তবে মার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। ছাত্রদলের সভাপতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাকে ফোন দিয়ে সুসংবাদটি দিয়েছি। পাশাপাশি মায়ের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।
শ্রাবণের বাবা কেশবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলাম। শ্রাবণের বড় ভাই মুস্তাফিজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। আরেক ভাই মোজাহিদুল ইসলাম উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। আর ছোট ভাই আজাহারুল ইসলাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক।
পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। আমি ছাত্রদল করি তাই তাদের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে আমার দুরত্ব রয়েছে। নানাজনে নানা কথা বলে। প্রায় ১০ বছর ধরে আমার সঙ্গে পরিবারের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন। পরিবার ভিন্নমতাদর্শের রাজনীতি করে, তাই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। পরিবার হয়তো মনে করছে আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে তাদের রাজনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। তারা যোগাযোগ রাখেনি; কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি। এটা শুধু আমার পরিবারের নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারেই দেখবেন ভিন্নমতের রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা এখন ইউনিয়ন পর্যায়েও নেই। দলীয় প্রতীক ইউনিয়ন পর্যায়ে যাওয়ার পর বর্তমান সরকার তৃণমূলের ঘরে ঘরে রাজনীতি ঢুকিয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে আমার পরিবার যেহেতু আওয়ামী লীগ করে, তারা তো আওয়ামী লীগের চরিত্রের বাইরে কিছু নয়। তারা আমাকে অস্বীকার করবে এটিই স্বাভাবিক। এজন্য মানবিক কারণে আমার দুঃখ প্রকাশ করা স্বাভাবিক। মা-বাবার সঙ্গে আমি থাকতে পারি না, তবে আদর্শিক কারণে আমি গর্বিত। সংগঠনের কারণে আমাকে পরিবার বিসর্জন দিতে হয়েছে। দল আমার সে আত্মত্যাগের মূল্যায়ন করেছে।
নতুন কমিটির চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, ঢাকার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কমিটি; ঢাকা মহানগরে প্রতিটি থানা ও ইউনিয়ন কমিটি এবং যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হল রয়েছে সেসব কমিটি সম্পন্ন করা। আমাদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে আগামী তিন মাসের মধ্যে ঢাকা শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা। সবাইকে একটি সাংগঠনিক পরিচয় দেওয়া। ছাত্ররাজনীতি জাতীয় রাজনীতি থেকে আলাদা কিছু নয়। ছাত্রদল জাতীয়তাবাদী আদর্শ, জিয়া পরিবার এবং সাধারণ ছাত্রদের যে চাহিদা রয়েছে তার সমন্বয় করে সামনে এগিয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ।
ছাত্রদলের বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২৭ বছর পর ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদলের নেতৃত্ব আসে। আমি সেই নির্বাচনে সভাপতি পদে অংশগ্রহণ করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলাম। ছাত্রদল নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েল আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। আমরা দুবছর ৭ মাস এক সঙ্গে কাজ করছি। খোকন শ্যামল কমিটিতে থেকে আমরা প্রায় ৮০ শতাংশ সাংগঠনিক কার্যক্রম শেষ করেছি। তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক কাঠামো ২০ বা ২৫ শতাংশ বাকি রয়েছে। এগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা শেষ করব।
ছাত্রদলের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সভাপতি হিসেবে আমার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ক্যাম্পাস রাজনীতিকে আরও গতিশীল করা। ব্যক্তি শ্রাবণ আমি যে আদর্শের রাজনীতি করি সেই হিসেবে আমার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে যাতে আন্দোলন করতে পারি সে চেষ্টা এবং আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান যাতে সসম্মানে দেশে আসতে পারেন তার জন্য যে আন্দোলন করা।
পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ করলেও নিজে ছাত্রদলের রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধান রহস্য হচ্ছে, যখন কলেজে ভর্তি হই তখন রাজনীতির যে কালচার ছিল; আমি দেখেছি ছাত্ররাজনীতির মধ্যে স্মার্ট, সদা হাস্যোজ্জ্বল মানুষের সঙ্গে মিশতে পারে এই ছেলেগুলো ছাত্রদলের রাজনীতি করে। মূলত এটা দেখার পর এই ছাত্রদলের প্রতি আমার আকৃষ্ট হওয়া। ওখান থেকেই ছাত্রদল বুকে লালন করা। এরপর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ছাত্রদলের রাজনীতিতে আমি সক্রিয় হই।
ঘোষিত আংশিক কমিটি কবে পূর্ণাঙ্গ হবে এবং যোগ্যতার মাপকাঠি কী হবে জানতে চাইলে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, নতুন কোনো নির্দেশনা আসবে কি না এ নিয়ে সাংগঠনিক অভিভাবকের সঙ্গে বিকালে (সোমবার) মিটিং রয়েছে। আমরা গতানুগতিক কমিটির স্টাইলে কথা বলব না। নেতাকর্মীরা যে তারিখ প্রত্যাশা করে তার আগেই কেন্দ্রীয় কমিটি প্রকাশিত হবে। কমিটির আকার খুব একটা বড় হবে না। তবে ত্যাগী, যোগ্য ও দক্ষ নেতাকর্মীরা কমিটিতে স্থান পাবে। আমি এবং আমার সাধারণ সম্পাদকের প্রধান কাজই হলো ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং ঢাকার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করানো।
বিএনপির আন্দোলনে ছাত্রদল কীভাবে সম্পৃক্ত হবে জানতে চাইলে শ্রাবণ বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের জন্য ছাত্রদল শুধু একা আন্দোলন করবে না; ছাত্রদল তাদের সমমনা সব ছাত্র-ছাত্রীর সাঙ্গে আলোচনা করবে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের একত্রিত করে চলমান আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপ দিতে চাই।