পরিবারে অভাবের কারণে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় মধ্যে পড়েছিলেন মারুফা খাতুন। তার পাশে দাঁড়িয়েছে র্যাব। শুক্রবার (৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে র্যাবের সাতক্ষীরা কোম্পানি কমান্ডার ইশতিয়াক হুসাইন মারুফার বাড়িতে গিয়ে তাকে মেডিকেলে ভর্তির জন্য সহায়তা প্রদান করেন।
মারুফা খাতুন সাতক্ষীরার তালা সদরের জেয়ালানলতা গ্রামের আজিত বিশ্বাসের মেয়ে। ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় ৭৪ স্কোর নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। মেরিট পজিশন ৩৫৩৪। ২০১৯ সালে তালার শহীদ আলী আহম্মদ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০২১ সালে তালা মহিলা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মারুফা। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান তিনি।
মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে মারুফার মেডিকেলে ভর্তির অনিশ্চয়তা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। বিভিন্নজন তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য আশ্বাস দেয়। আর্থিক সহায়তা নিয়ে সাতক্ষীরা র্যাবের কমান্ডার হাজির হন মারুফার বাড়িতে।
মারুফা খাতুন বলেন, আমি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু বাবা গবিব মানুষ। ভর্তির টাকা নেই। নদীতে মাছ ধরে সংসার চলে আমাদের। মেডিকেলে ভর্তির জন্য র্যাবের স্যার আমাকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন। আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার আর ভর্তির টাকার সমস্যা থাকল না। আমি এখন সবার কাছে দোয়া চাই, যেন লেখাপড়া শেষ করে ভালো ডাক্তার হতে পারি।
মারুফার বাবা আজিত বিশ্বাস বলেন, আমার তিন মেয়ের মধ্যে মারুফা বড়। মেঝো মেয়েটা মাদ্রাসায় পড়ে। ছোট মেয়েটা এখনো স্কুলে যায় না। মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করে টাকা নিয়ে মেয়েকে পড়িয়েছি। নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে যায়। মেয়েটা ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে। তবে ভর্তি করানোর টাকা আমার ছিল না। র্যাবের স্যারেরা টাকা দিয়েছেন আমরা খুব খুশি হয়েছি।
তালা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, পরিবারটি খুব অসহায়। গরিব পরিবারের মেয়েটি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে এলাকার সুনাম বয়ে এনেছে। তবে টাকা নেই তাদের। র্যাবের পক্ষ থেকে মেয়েটিকে মেডিকেলে ভর্তির জন্য সহায়তা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন র্যাবের কোম্পানি কমান্ডার ইশতিয়াক হুসাইন। যা মানবিক কর্মকাণ্ডকে আরও গতিশীল করবে। ব্যক্তিগতভাবে আমিও মেয়েটিকে সহায়তা করব।
র্যাবের সাতক্ষীরা কোম্পানি কমান্ডার ইশতিয়াক হুসাইন বলেন, র্যাবের কাজই হচ্ছে জনসেবামূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। আমরা খবর পেয়েছিলাম, মারুফা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছে না। খবরটি পাওয়ার পর আমরা তাকে ভর্তির জন্য টাকা দিয়েছি। এটা আমাদের সেবামূলক কাজ। এছাড়া মারুফার মতো এমন যারা রয়েছে তাদের পাশেও র্যাব দাঁড়াবে।
সাতক্ষীরা মেডিকেলের স্টুডেন্ট বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর আসাফুর রহমান জানিয়েছেন, সাতক্ষীরা মেডিকেলে ভর্তির জন্য ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়। ভর্তির টাকাসহ দুই বছরের বেতন একত্রে ২০ হাজার টাকা। গরিব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় অধ্যক্ষের নির্দেশনায় সর্বোচ্চ ২-৩ হাজার টাকা কম রাখা হয়।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. রুহুল কুদ্দুস বলেন, গরিব কোনো শিক্ষার্থীকে কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে একাডেমিক কাউন্সিল থেকে সামান্য কিছু সুযোগ নিতে পারবে গরিব শিক্ষার্থীরা। এখনো মেডিকেলে ভর্তির দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি বলে তিনি জানান।