1. hrhfbd01977993@gmail.com : admi2017 :
  2. editorr@crimenewsmedia24.com : CrimeNews Media24 : CrimeNews Media24
  3. editor@crimenewsmedia24.com : CrimeNews Media24 : CrimeNews Media24
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০২ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
"ফটো সাংবাদিক আবশ্যক" দেশের প্রতিটি থানা পর্যায়ে "ক্রাইম নিউজ মিডিয়া" সংবাদ সংস্থায় ১জন রিপোর্টার ও ১জন ফটো সাংবাদিক আবশ্যক। আগ্রহী প্রার্থীরা  যোগাযোগ করুন। ইমেইলঃ cnm24bd@gmail.com ০১৯১১৪০০০৯৫

সরকার বাঁচাতে ইমরান খান ধর্মকে ব্যবহার করছেন?

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২, ৪.৫৩ পিএম
  • ১৩৮ বার পড়া হয়েছে

ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এবং রাস্তায় সমাবেশ পাকিস্তানে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানসহ বিরোধী নেতারা বিভিন্ন ধর্মীয় রেফারেন্স এবং শব্দ ব্যবহার করছেন।

আপাত দৃশ্যমান যে, পাকিস্তানের রাজনীতিতে বর্তমানে ধর্মের তাস ভালোই খেলা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এবারই কি প্রথম পাকিস্তানে এমন হচ্ছে?

পরে আহমদিয়াবিরোধী দাঙ্গা, রেজোলিউশনের উদ্দেশ্য, মৌলিক নীতি কমিটির প্রতিবেদন এবং ১৯৬২ সালের সংবিধান পাকিস্তানের রাজনীতিতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে।

৭৫ বছর ধরে ধর্মের ব্যবহার 
লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সের সাথে যুক্ত ইতিহাসের অধ্যাপক আলী উসমান কাসমি বলছেন, এ দেশের ভিত্তিই যখন মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে এর আলাদা পরিচয়, তখন কোনো না কোনোভবে তা ধর্মের সাথে যুক্ত থাকবেই।

কাসমি বলেন, গত ৭০-৭৫ বছর ধরে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে। মৌলিক নীতিগুলো দিয়েই এর শুরু। তারপর আইয়ুব খানের আমলে, একটি নতুন রূপ গ্রহণ করা হয়, যার মাধ্যমে একটি নতুন ইসলামের রাজনীতি চলে। এতে আইয়ুব খান নিজেকে কামাল আতাতুর্কের মতো করে উপস্থাপন করেন। তারা আধুনিক ইসলাম ও মোল্লাদের ইসলামের মধ্যে একটি বিরোধ শুরু করে নিজেদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন এবং রাষ্ট্র গঠনে ধর্মের ভূমিকাকে অন্তর্ভুক্ত করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা
আলী উসমান কাসমির মতে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানকে উপমহাদেশের মধ্যে মুসলমানদের আপনভূমি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার একটা প্রয়াস দেখা যায়। পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ হয়ে মুসলমানদের একটা বড় অংশ আলাদা হয়ে যায়। এছাড়া ভারতেও বিপুল সংখ্যক মুসলমান রয়েছে। এরপর যেটা দাঁড় করোনোর চেষ্টা করা হয় তা হলো- পাকিস্তান হলো প্রকৃত মুসলমানদের আবাসস্থল।

১৯৭১ সালের যুদ্ধে পরাজয় পাকিস্তানের বেসামরিক জনগোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছিল। অনেকের ধারণা জন্মায় ধর্মের সঙ্গে দূরত্বের কারণেই যুদ্ধে হার হয় পাকিস্তানের।

সেই সময়ের যুদ্ধবন্দীদের আত্মজীবনী পাঠ করে দেখা যায় যে তারা ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ১৯৭১ সালের পর ধর্মের উল্লেখ এবং ধর্মীয় তাস ব্যবহারের বিষয়টি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। সেটা আহমদিয়া মুসলমানদের অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করা হোক, জুমার দিনে সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করা হোক বা মদ নিষিদ্ধ করা হোক।

জিয়া-উল-হক ও ভুট্টো


গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ এবং তারপর জেনারেল জিয়া-উল-হক ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানে ইসলামী আইন প্রণয়ন করা হয়।

‘পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংগ্রাম’ বইয়ের লেখক ড. অধ্যাপক মোহাম্মদ ওয়াসিম বলছেন, জুলফিকার আলী ভুট্টোর তুলনায় জেনারেল জিয়া-উল-হকের জনপ্রিয়তা এবং সাংবিধানিক আধিপত্য কম ছিল, তাই তিনি প্রতিযোগিতার মুখে ধর্মকে একটি শক্তি হিসেবে নিয়ে এসেছিলেন। সেই সময়ে ইসলামী আইন তৈরি করা হয়েছিল এবং সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ তা মানানোর বন্দোবস্ত করেছিল।

জুলফিকার আলীর সময়ে ১৯৭৭ সালের নির্বাচন জালিয়াতির কারণে স্থগিত করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। জুলফিকার আলী ভুট্টোর মন্ত্রিসভার সদস্য মাওলানা কাউসার নিয়াজি তার ‘এন্ড দ্য লাইন হ্যাজ বিন কাট’ বইয়ে লিখেছেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে শুরু হওয়া এই আন্দোলন অল্প সময়ে ধর্মীয় রঙ ধারণ করে।

মাওলানা কাউসার নিয়াজির মতে, মাওলানা শাহ আহমদ নিয়াজির দল জমিয়ত-উলেমা-পাকিস্তানের কারণে এটা হয়। যার কারণে এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক না থেকে নিজাম-ই-মুস্তাফা (নবীর শাসন) হয়ে ওঠে।

এই আন্দোলন তীব্রতর হওয়ার সাথে সাথে মাওলানা কাউসার নিয়াজী জুলফিকার আলী ভুট্টোকে একটি উপদেশ দেন- যখন কোনো আন্দোলনে ধর্ম ঢুকে পড়ে, তখন ওই আন্দোলনে মানুষ নিজের জীবন উৎসর্গ করতে শুরু করে।

এই পরামর্শের ব্যাখ্যায় কাউসার নিয়াজী লিখেছেন, অশান্ত ওই পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য জরুরি ছিল এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যার ফলে ইসলামের স্লোগানগুলোর ‘মালিকানা’ পাকিস্তানি কওমি ইত্তেহাদের (আন্দোলন) হাত থেকে প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর হাতে চলে আসে।

মাওলানা কাউসার নিয়াজির মতে, রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য এ ধরনের ঘোষণা জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি। দুর্ভাগ্যবশত, প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে ধর্মশাস্ত্রের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করছিলেন।

কিন্তু মে মাসের মধ্যে পরিস্থিতি বদলে যায়। মাওলানা কাউসার নিয়াজির মতে, আন্দোলন তীব্রতর হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর জন্য রাজনৈতিক স্থান সীমিত হয়ে আসে।

জুলফিকার আলী ভুট্টো কিছুটা নমনীয় হয়েছিলেন এবং কিছু সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন, কাউসার লিখেছেন।

ভুট্টোর ঘোষণা প্রসঙ্গে কাওসার নিয়াজি লিখেছিলেন- লাহোর গভর্নর হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি মদ ও জুয়া নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেন।

মোশাররফের নতুন পন্থা


৯/১১ হামলার পর যখন সারা বিশ্বের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি বদলে যায়, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা পাকিস্তানের পার্শ্ববর্তী এলাকায় আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে আক্রমণ করে। এর ফলে জিহাদিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু পারভেজ মোশাররফ সরকার বিষয়টিকে আলাদা করে রাখে।

আলী উসমান কাসমি বলেন, ২০০০ সালের পর পারভেজ মুশাররফের কাছ থেকে নতুন ধারণা পাওয়া যায় এবং পাকিস্তানকে মতাদর্শিক জাতির পরিবর্তে একটি জাতীয়তাবাদী দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে শুরু করেন।

কাসমি বলেন, ২০০৮ ও ২০১৩ সালের নির্বাচনের দিকে তাকান। জারদারি ও মিয়া নওয়াজ শরিফের সরকারে ধর্মীয় কার্ড ব্যবহার করা হয়নি। এক ধরনের রাজনৈতিক পরিপক্কতা দেখা যায় যে পাকিস্তানে এই জাতীয় ধর্মীয় ব্যবহারের দরকার নেই। কিন্তু যখন খতম-ই-নবুওয়াত সামনে রেখে তেহরিক-ই-লাব্বাইক পার্টি যাত্রা শুরু করল, তখন এর পেছনে উদ্দেশ্য ছিল যে  ডানপন্থী ভোটারদের নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা।

ধর্মীয় কার্ড ফিরিয়ে আনলেন ইমরান খান
২০১৮ সালে যখন ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ পাকিস্তানে ক্ষমতায় আসে, তখন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ঘোষণা করেছিলেন যে তার সরকার মদিনার (নবী মোহাম্মদের (সা.) সময়ে) সরকারের মতো চলবে এবং বিভিন্ন বক্তব্যে এর উল্লেখও করেন তিনি।

আলি কাসমি বলছেন, ক্ষমতায় আসার পর ইমরান খান পাকিস্তানের রাজনীতিতে ধর্মকে নতুন রঙ ও স্টাইলে দাঁড় করিয়েছিলেন। এখন আর তা কোনো দলের হাতে নেই। ইমরান খান বিষয়টি তুললেও এখন তার বিরোধীরাও রিয়াসাত-ই-মদিনা স্লোগান ব্যবহারের জন্য উদগ্রীব।

ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ইসলামাবাদের উস্তাদ হাসান আল আমিন বলেন, ইমরান খান প্রথমে কিছু বক্তব্য দেন এবং পরে তিনি ধর্মকে ব্যবহার করতে শুরু করেন। এটা খুব বিভ্রান্তিকর।  স্বল্পমেয়াদি লাভের জন্য এভাবে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, খুব কম মানুষই আছে যারা যৌক্তিকভাবে চিন্তা করে। এইসব বক্তব্য শুনে বেশিরভাগই মনে করে ন্যায়ের পক্ষে আছে আর অন্যদিকে শয়তান ও ধর্মের শত্রু রয়েছে, এবং শেষ পর্যন্ত, বিতর্কটি ইসলাম এবং অবিশ্বাসের দিকে যায়।

হাসান-উল-আমিনের মতে, যখন ধর্মীয় দলগুলো ধর্মীয় কার্ড ব্যবহার করে, তখন তাদের একটি এজেন্ডা থাকে, তাদের একটি ইশতেহার এবং কর্মসূচি থাকে। কিন্তু পিটিআই এমন উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরিই হয়নি, এটা তাদের মূল উদ্দেশ্য নয়।

তারা স্বল্পমেয়াদি স্বার্থ এবং সুবিধার জন্য মানুষকে প্ররোচিত করছে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকারক।

তুরুপের তাস ধর্ম 
পাকিস্তানে অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি ইমরান খান ও বিরোধী দলীয় নেতা ফজলুর রহমান ধর্মীয় বক্তব্য দিচ্ছেন। এটা কি আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে? তাও যখন ধর্মীয় দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক গত নির্বাচনে ভালো ভোট পেয়েছে?

আলি কাসমি বলছেন, পাকিস্তানের রাজনীতি আবার সেই পথেই হাঁটছে, যেখানে কে সবচেয়ে বেশি ধর্মকে ব্যবহার করতে পারে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা হবে। আগামী নির্বাচনেও এই বিষয়টি সত্য প্রমাণিত হবে।

গবেষক ও লেখক ড. আয়েশা সিদ্দিক বলেছেন, ধর্ম একটি তুরুপের তাস, তা সে যেই হাতে আসুক না কেন। একে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে কেউ কেউ এগিয়ে যায়।

এটাই পাকিস্তানের রাজনীতির প্রকৃতি, কারণ এই রাজনীতি ধর্ম ছাড়া আর কিছুই জনগণকে দিতে পারে না। মুসলিম লিগ (নওয়াজ), জামায়াত-ই-ইসলামি এবং তেহরিক-ই-ইনসাফও ধর্মকে ব্যবহার করে।

পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসের ওপর নজর রাখা সাংবাদিক ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ধর্মীয় ইস্যুর ব্যবহার পুরনো ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতা। এই প্রচেষ্টা কি অতীতের চেয়ে আলাদা হবে? এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় এখনও আসেনি।

 

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazar_crimenew87
© All rights reserved © 2015-2021
Site Customized Crimenewsmedia24.Com