বিদ্যুৎ-জ্বালানির তীব্র সংকট এবং খাদ্য ও ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম দিন দিন অসহনীয় পর্যায়ে বৃদ্ধির জেরে শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকশের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষোভের একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলার চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
বৃহস্পতিবার রাতের এই ঘটনার পর শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে কারফিউ জারি করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
পরে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কার পুলিশের মহাপরিদর্শক সিডি বিক্রমরত্নে বলেছেন, ‘পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ কলম্বোর বেশিরভাগ জেলায় কারফিউ চলবে।
আলজাজিরা বলছে, বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী কলম্বোর মিরিহানা জেলায় প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের ব্যক্তিগত বাসভবনের সামনে থাকা ব্যারিকেড সরিয়ে সামনে এগোনোর সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শত শত বিক্ষোভকারী। এসময় বিক্ষোভকারীদের অনেকে ‘ঘরে ফিরে যাও গোটা!’ এবং ‘গোটা একজন স্বৈরশাসক’ বলে স্লোগান দেন। মূলত পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষের পরই কারফিউ জারির পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
সংঘর্ষের পর প্রকাশ্যে আসা বেশ কয়েকটি ভিডিওতে একটি পুলিশ বাসে আগুন জ্বলতে এবং বিক্ষোভকারীদেরকে আহত রক্তাক্ত এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে দেখা যায়। অবশ্য পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষের সময় প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকশে তার বাসভবনে ছিলেন কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। এছাড়া পুলিশের একজন মুখপাত্র এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ভয়ঙ্কর আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। ফুরিয়ে এসেছে জ্বালানি তেলও। গত এক সপ্তাহ ধরে এই কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে লড়লেও, বৃহস্পতিবার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙে শ্রীলঙ্কাবাসীর।
প্রায় ৫ হাজারেও বেশি মানুষ রাজধানীতে দেশের প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, এখনই পদত্যাগ করা উচিত প্রেসিডেন্টের। বিক্ষোভ ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আশপাশের পরিস্থিতিও। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হয়ে প্যারামিলিটারি পুলিশ বাহিনী, স্পেশাল টাস্ক ফোর্সকে ঘটনাস্থলে ডাকা হয়।
১৯৪৮ সালের পর এই প্রথম এমন চরম আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী, কিছুই মিলছে না। জ্বালানি থেকে রান্নার গ্যাস, হু হু করে বাড়ছে সবকিছুরই দাম। বৃহস্পতিবারই জানানো হয়, শ্রীলঙ্কায় ডিজেল শেষ হয়ে গেছে। অতি সামান্য পরিমাণই পেট্রোল থাকলেও তা দিয়ে আর এক সপ্তাহ কাজ চালানো যাবে।
এদিকে ডিজেল শেষ হয়ে যাওয়ার ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই রাস্তা থেকে উধাও হয়ে যায় সকল গণপরিবহন। অন্ধকারে ডুবে যায় গোটা দেশ। প্রায় ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। লোডশেডিংয়ের প্রভাব সবথেকে বেশি পড়ছে দেশের হাসপাতালগুলোতেই। সেখানে ইতোমধ্যেই বিদ্যুতের অভাবে অস্ত্রোপচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে সাধারণ চিকিৎসা সেবাও।
অন্যদিকে, বিদ্যুতের অভাবে প্রভাব পড়েছে ফোন বেস স্টেশনগুলোতেও। ফোনে অর্ধেক সময়ই কোনো কথা বলা যাচ্ছে না। কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জের সময়সীমাও কমিয়ে আড়াই ঘণ্টা করে দেওয়া হয়েছে। অফিসগুলোতে অত্যাবশ্যকীয় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মীদেরই কেবল আসতে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ বাঁচাতে নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে রাস্তার আলোও।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকশের পুরো পরিবারই শ্রীলঙ্কার একাধিক শীর্ষ পদে রয়েছেন। প্রেসিডেন্টের বড় ভাই মাহিন্দ্রা রাজাপাকশে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। ছোট ভাই বাসিল রাজাপাকশে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন অর্থমন্ত্রীর।