রাশিয়ার গোলাবর্ষণে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অন্তত দু’জনের প্রাণহানি ঘটেছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, আগ্রাসী বাহিনী ইউক্রেনের রাজধানী দখলে মরণ কামড় দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার কিয়েভের মেয়র রাজধানীতে ৩৫ ঘণ্টার জন্য কারফিউ ঘোষণা করেছেন; যা শুরু হবে স্থানীয় সময় রাত ৮টা থেকে।
মঙ্গলবার ভোরের কিছু আগে শহরের কেন্দ্রস্থলে দু’টি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সোমবার শেষ রাতের দিকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী শত্রুপক্ষের একটি ড্রোনকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর পর রাজধানীজুড়ে বুলেটের ঝলকানি দেখা গেছে।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিৎচকো বলেছেন, ‘আজকের দিনটি কঠিন এবং বিপজ্জনক এক মুহূর্ত।’
‘রাজধানী হল ইউক্রেনের প্রাণ এবং এটি রক্ষা করা হবে। বর্তমানে ইউরোপের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার প্রতীক এবং সম্মুখ লড়াইয়ের অন্যতম ঘাঁটি হয়ে ওঠা কিয়েভকে আমরা কখনই ছেড়ে দেব না।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা কামানের গোলার আঘাতের পর একটি উঁচু ভবনে আগুন দেখতে পেয়েছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন এবং উদ্ধারকারী কর্মীরা ভবনে আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধারে সহায়তা করছেন। এ সময় ব্যাগে ভর্তি একটি মরদেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে কিয়েভ। কিন্তু রাশিয়ার সামরিক বাহিনী তুলনামূলক ধীরগতিতে এই শহর অভিমুখে এগিয়ে চলছে এবং চলতি সপ্তাহে সেখানে গোলাবর্ষণের তীব্রতা বাড়িয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইগোর ক্রুপা বলেছেন, ‘খারকিভ, মারিউপোল এবং অন্যান্য শহরে এখন যা ঘটছে, তা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই অথবা আরও পরে কিয়েভেও তাই ঘটবে।’
ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের বাইরে মাটিতে বসে ‘কীভাবে তিনি ঘুমাতে যাওয়ার আগে আসবাবপত্র এবং অন্যান্য ধাতববস্তু দিয়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছিলেন’ সেই দুঃসহ স্মৃতি বর্ণনা করেছেন।
‘এটি আসলে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। কারণ সব জানালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। ভবন ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে এবং আমি অক্ষত রয়েছি। মাত্র কয়েকটি আঁচড় লেগেছে।’
শহরের অন্য প্রান্তে গোলার আঘাতে বাড়িঘরের জানালা, ব্যালকনি উড়ে গেছে। ভবনের নিচে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘর থেকে ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করছেন। রাশিয়ার আগ্রাসনে ইউক্রেনে হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং ২০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার অভিযোগ করে রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনকে অসামরিকায়ন এবং নাৎসিমুক্ত করতে বিশেষ সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু ইউক্রেন রাশিয়ার অভিযানকে অবৈধ হিসাবে দাবি করে দখলদারির অবসান না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।