সিএনএম প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরে স্ত্রী ও তার প্রেমিককে মারধর করার প্রতিশোধ নিতে ঘুমন্ত সুমন মোল্লাকে (২৮) শ্বাসরোধে হত্যার পর ছয় টুকরো করা হয়। পরে লাশের টুকরো, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত করাত ও চাপাতি বিভিন্নস্থানে ফেলে গুম করার চেষ্টা করেন নিহতের স্ত্রী ও তার প্রেমিক।
এ ঘটনায় সুমনের স্ত্রী ও দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার নারায়ণপুর এলাকার মৃত আশরাফ আলীর মেয়ে আরিফা (২৪) এবং ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার নরকোনা এলাকার আদিত্য সরকারের ছেলে তনয় সরকারকে (৩১) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (৩০ মে) দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার মো. জাকির হাসান সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিহত সুমন মোল্লা (২৮) বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার গোলা বরননী বাজার এলাকার জাফর মোল্লার ছেলে।
জিএমপির উপকমিশনার মো. জাকির হাসান জানান, গত ২১ এপ্রিল দুপুরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানাধীন সারদাগঞ্জের হাজী মার্কেট পুকুরপাড় এলাকার জামাল উদ্দিনের বাড়ির পাশের খোলা সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে কাঁথা দিয়ে পেঁচানো মাথা ও হাত-পাবিহীন অবস্থায় অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে উদ্ধারকৃত লাশটি সুমনের বলে শনাক্ত করেন স্বজনেরা।
অজ্ঞাতপরিচয় আসামির বিরুদ্ধে কাশিমপুর থানায় মামলা করেন উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। দীর্ঘ তদন্তের পর ক্লুলেস এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সুমনের স্ত্রী আরিফা বেগম ও আরিফার প্রেমিক তনয় সরকারকে গতকাল শনিবার ভোরে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে জিএমপি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা সুমনকে খুন করার কথা স্বীকার করেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সকালে তেঁতুইবাড়ি এলাকার মোজা তৈরির কারখানার পাশে থাকা ময়লার ভাগাড় থেকে পলিথিনে মোড়ানো সুমনের লাশের মাথা, দুই হাত ও দুই পা উদ্ধার করা হয়। রাতে সারদাগঞ্জের হাজীবাড়ি পুকুরপাড় ময়লার স্তুপ হতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও করাত এবং তনয়ের ঘর থেকে নিহত সুমনের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া দুজনকে আজ আদালতে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে উপকমিশনার জাকির হাসান জানান, প্রায় দেড় বছর আগে ভালোবেসে আরিফাকে বিয়ে করেন সুমন মোল্লা। এটি সুমন মোল্লার তৃতীয় ও আরিফার দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পর এ দম্পতি কাশিমপুরের সারদাগঞ্জ হাজী মার্কেট এলাকার মাওলানা শফিউল্লাহর বাড়িতে ভাড়া থাকেন। আরিফা চার বছর ধরে স্থানীয় স্কয়ার টেক্সটাইল মিলে চাকরি করেন। একই কারখানায় চাকরি করেন প্রতিবেশী হাজী মতিউর রহমানের বাড়ির ভাড়াটিয়া তনয় সরকার। পরিচয়ের সূত্র ধরে দুই সহকর্মী আরিফা ও তনয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ ঘটনা জানতে পেরে সুমন তার স্ত্রী আরিফা ও তনয় সরকারকে কয়েকবার মারধর করেন। এর প্রতিশোধ নিতেই তারা সুমনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনানুযায়ী গত ১৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে খাওয়া-দাওয়া শেষে স্বামী সুমনকে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেন স্ত্রী আরিফা। সুমন ঘুমিয়ে পড়লে আরিফা ফোন করে প্রেমিক তনয়কে ডেকে মধ্যরাতে বাসায় ডেকে আনেন। পরে বালিশ চাপা দিয়ে সুমনকে হত্যা করেন। লাশ গুম করতে তা ঘরের ভেতরে রেখে দেন। পরদিন বাজার থেকে করাত কিনে আনেন তনয়। রাতে আরিফা ও তনয় করাত দিয়ে সুমনের লাশের মাথা, দুই হাত ও দুই পা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মোট ছয় টুকরো করেন। এ সময় চাপাতি দিয়ে লাশের পেট কেটে দেন তারা। ২০ এপ্রিল রাতে হাত-পা বিহীন দেহটি কাঁথায় মুড়িয়ে পাশের জামাল উদ্দিনের বাড়ির পাশে উন্মুক্ত সেপটিক ট্যাঙ্কে এবং ২১ এপ্রিল রাতে দেহের অবশিষ্ট পাঁচটি খণ্ড (মাথা, দুই হাত ও দুই পা) পলিথিনে মুড়িয়ে স্থানীয় চক্রবর্তী তেঁতুইবাড়ি এলাকার মোজা তৈরির কারখানার পাশে থাকা ময়লার ভাগাড়ে ফেলে রাখে। পরে তারা ঘর ধুয়ে রক্ত পরিষ্কার করেন। এ ঘটনার কয়েকদিন পর হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও করাত সারদাগঞ্জের হাজীবাড়ি পুকুরপাড় ময়লার স্তুপে ফেলে আরিফা ওই বাসা ছেড়ে তার বোনের বাসায় আত্মগোপন করেন।
প্রেস ব্রিফিংকালে জিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার রেজওয়ান আহমেদ, সহকারী কমিশনার রিপন চন্দ্র সরকার, কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবে খোদা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।