সিএনএম প্রতিনিধিঃ
ঢাকা শহরে ১০ থেকে ১২ লাখ বাড়িওয়ালা রয়েছেন। প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই কমবেশি ভাড়াটিয়া থাকেন। তবে প্রতারক চক্রের অনেক সদস্য ভদ্রবেশী ভাড়াটিয়া হিসেবে অনেক বাসায় অবস্থান করছেন। চুরি-ডাকাতির পাশাপাশি খুনের মতো ঘটনা ঘটছে তাদের হাতে। এক্ষেত্রে বাড়িওয়ালাদের সাবধানতা অবলম্বনের অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানাধীন ঝাউচরে এক বাড়ির মালিককে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানোর পর স্ত্রীকে হাত পা বেঁধে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মালামাল ডাকাতি করে পালিয়ে যায় একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র।
সোমবার (১৭ মে) দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা ও ময়মনসিংহ) ইমাম হোসেন।
তিনি বলেন, গত ৮ মে রাতে সোনারগাঁও থানাধীন ঝাউচরে বাড়ির মালিক মো. আজিম উদ্দিনকে (৭৫) নেশা জাতীয় দ্রব্য খাওয়ানোর পর অজ্ঞান করে এবং আজিম উদ্দিনের স্ত্রী হোসনেয়ারাকে (৬৪) হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ৫ ভরি স্বর্ণালংকার এবং নগদ টাকা লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় বাড়ির মালিক আজিম উদ্দিনের ছেলে আল আমিন বাদী হয়ে ভাড়াটিয়া দম্পতিসহ অজ্ঞাতনামা দুইজনের বিরুদ্ধে সোনারগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরপরই সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে।
তদন্তে জানা যায়, প্রতারক চক্রের সদস্য মো. সুমন (২৩) ও মো. শিপন মিয়া (২০) প্রথমে ওই বাড়ির একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে যান। তবে বাড়ির মালিকের স্ত্রী হোসনেয়ারা তাদের কাছে বাড়ি ভাড়া দেননি। পরে চক্রের অপর দুই সদস্য মো. হারুন অর রশিদ (২৪) ও তার স্ত্রী মোসা. সুলতানা খাতুনকে (২৫) পাঠানো হয়। তারাই পরিকল্পনা অনুযায়ী চার মাস আগে বাসাটি ভাড়া নেন। এই চার মাসে সুলতানা খাতুন বাড়ির মালিকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন। গত ৭ মে রাতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বৃদ্ধ আজিম উদ্দিনকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান তারা। তবে তিনি না ঘুমিয়ে উল্টো অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই রাতে তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। বৃদ্ধ আজিম উদ্দিনকে নিতে হয় হাসপাতালে।
পরদিন ফের একই কৌশল অবলম্বন করে বৃদ্ধ আজিম উদ্দিনকে চায়ের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানো হয়। তিনি ঘুমিয়ে পড়লে তাদের ঘরে গিয়ে বৃদ্ধা হোসনেয়ারাকে হাত-পা বেঁধে ও শ্বাসরোধে হত্যা করে নগদ টাকা স্বর্ণালংকার লুট করে পালিয়ে যায় চারজন। তদন্তে নতুন ভাড়াটিয়া হারুন অর রশিদ ও তার স্ত্রী সুলতানা খাতুনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। পরে তাদের গাজীপুরের জিরানী থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বাড়ি রংপুর মিঠাপুকুরে।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেয়। পরবর্তীতে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
হারুন ও সুলতানা খাতুনের তথ্যের ভিত্তিতে এ খুনের মূল পরিকল্পনাকারী মো. সুমন ও শিপন মিয়াকে রোববার (১৬ মে) রাত সোয়া ৩টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে স্বর্ণের ১টি চেইন, ১টি ঘড়ি, ১টি স্মার্টফোন ও নগদ ১০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ইমাম হোসেন বলেন, চক্রের সদস্যরা মনে করেছিল, ওই বাড়িতে অনেক নগদ টাকা আছে। এরপরই ডাকাতির পরিকল্পনা করে তারা। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা বাড়ির মালিকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। গল্পগুজব ও নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশ্রিত চা খাওয়াতে ব্যস্ত থাকেন দুজন। বাকি দুজন এ সুযোগে লুট ও খুনে ব্যস্ত ছিলেন। তবে ঠিক কী পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেছে তা বৃদ্ধ আজিমউদ্দিন বলতে পারেননি। তার স্ত্রী বিষয়টি জানতেন বলে দাবি করেন তিনি।
ইমাম হোসেন বলেন, ঢাকা শহরে এমন ঘটনা প্রচুর আছে। ঢাকায় ১০-১২ লাখ বাড়ির মালিক আছেন। ভাড়াটিয়া আছেন ৩০-৪০ লাখ। ভদ্রবেশী ভাড়াটিয়ারা মূলত পেশাদার অপরাধী চক্রের সদস্য। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে বাড়ির মালিকদের সাবধান হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।