এস.ইসলামঃ
জুমাতুল বিদা আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ সমাপনী সম্মিলন। সিয়াম সাধনার মাস রমজানের শেষ শুক্রবারকে বলে। ধর্মপ্রাণ মানুষ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। একে কেন্দ্র করে প্রতিটি মুসলিম মনে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়।
এক মাসের সিয়াম সাধনা শেষে মুসলিম মনে যে ঈদুল ফিতরের আনন্দ আসে তারই বার্তা জানান দেয় জুমাতুল বিদা। প্রতি সপ্তাহের জুমা মুসলিম মনে এক নয়া জাগরণ সৃষ্টি হয়।
পবিত্র কোরআনে জুমা নামে স্বতন্ত্র একটি সূরা রয়েছে। এক হাদিসে জুমাকে সাপ্তাহিক ঈদ বলা হয়েছে। জুমাতুল বিদাকে সব জুমার শ্রেষ্ঠ জুমা বলা হয়।
আমাদের দেশে দীর্ঘ এক মাসের রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের রমজান শেষে আকাশে বাঁকা ঈদের চাঁদ ওঠে, তাকে কেন্দ্র করে মানুষের মনে আনন্দের হাওয়া বয়ে যায়। মসজিদের ইমাম-খতিবরা যখন রমজানকে বিদায় জানানোর বক্তব্য দেন, তখন থেকেই শ্রোতাদের মন ঈদের নামাজের জন্য উসখুস করে।
জুমাতুল বিদা আদায় করতে মুসল্লির উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায় পাড়া-মহল্লায়। এদিন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের উল্লেখযোগ্য মসজিদগুলোতে তিল পরিমাণ ঠাঁই থাকে না। নামাজি মুসল্লিদের কাঁধে কাঁধ মিলানো কাতার চলে আসে রাজপথে। অনেক স্থানে ঈদের জামাতের চেয়েও জুমাতুল বিদার জামাত বড় হয়ে পড়ে। জুমাতুল বিদার বড় জামাতে অংশগ্রহণ করা মানুষজন বড় পুণ্যের মনে করে থাকেন। ফলে গ্রাম কিংবা মফস্বল এলাকার বহু ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে আসে শহরের বড় বড় মসজিদে জুমাতুল বিদার জামাতে শরিক হতে।
আতর-গোলাপের সুঘ্রাণ, সাদা পোশাক, মাথায় টুপি- এসব মিলে যেন এক বেহেশতি দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। ঈদের আগে এ যেন এক ভিন্ন রকমের ঈদ।
ধর্মে জুমাতুল বিদার সরাসরি গুরুত্ব বহনকারী কোনো বক্তব্য না পাওয়া গেলেও একে কেন্দ্র করে মানুষের হৃদয়ে আনন্দ বয়ে যায়।
হাদিসে সাধারণ জুমার যেই গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে, জুমাতুল বিদার ফজিলত যে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি, তা যৌক্তিকভাবেই বলা যায়।
হাদিসে এমনও বর্ণনা পাওয়া যায়, রাসূলুল্লাহ (সা.) জুমাতুল বিদার খুতবায় ‘আল-বিদা-আল বিদা’ শব্দ উচ্চারণ করতেন। এ শব্দ শোনার পর সাহাবায়ে কিরাম বিলাপ করে কান্না শুরু করতেন। তারা সবাই রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তাবাহী রমজানকে জুমাতুল বিদায় বিদায় জানাতেন। পরবর্তী রমজান ভাগ্যে জুটে কিনা ক্ষমাপ্রাপ্তির মাস ভাগ্যে জুটে কিনা- এসব ভেবে সাহাবায়ে কিরাম কান্না করতেন।
তাফসিরে ইবনে কাসিরের বর্ণনা মতে, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, তখন যে দোয়াই করা হয়, তাই কবুল করা হয়। সহিহ হাদিসে এ কথা প্রমাণিত রয়েছে। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, কোনো ধর্মীয় মজলিসে যদি অন্তত চল্লিশজন লোক একত্রিত হয়ে কোনো দোয়া করে, তা হলে আল্লাহতায়ালা তাদের মধ্যে যে কোনো একজনকে অলির মর্যাদা দিয়ে তার সঙ্গে সবার দোয়া কবুল করে নেন। জুমাতুল বিদার বিশাল জামাতে আমাদের দেশের বিভিন্ন মসজিদে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাই ওই দিনের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার খুবই সম্ভাবনা থাকে।
হাদিসে রয়েছে, রমজান মাসে প্রতিদিন ইফতারের আগে আল্লাহতায়ালা সত্তর হাজার গুণাহগারকে ক্ষমা করে দেন। এভাবে সমগ্র রমজানে যে পরিমাণ গুনাহগারকে ক্ষমা করা হয় শুধু জুমাতুল বিদার দিনে একই পরিমাণ ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয়। তাই এ দিনে প্রাণ খুলে আল্লাহর দরবারে রোজাদারের প্রার্থনা করা উচিত।
হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেছেন রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলীম)। তাই সারা বছরের মাঝে মুমিনের কাছে রমজান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুমাতুল বিদার মাধ্যমে কার্যত রোজাকে বিদায় জানানো হয়।
আরেক হাদিসে এসেছে, তোমাদের কারো রোজা থাকা অবস্থায় যদি কেউ তার সাথে জাহেলের মতো আচরণ করে তাহলে সে বলে দেবে যে, আমি একজন রোজাদার। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস: ৫৯২৭, সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৫১,) অর্থ্যাৎ রোজা মানুষকে যেমন নানা অপকর্ম থেকে রক্ষা করে, তেমনি সামাজিক শৃঙ্খলাতেও ফেরাতে সাহায্য করে। আল্লাহতায়ালা প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে আগামী রোজা পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন