সিএনএমঃ
কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), অভিযানে আন্তঃজেলা চোর চক্রের সক্রিয় ১২ সদস্য গ্রেফতারসহ ০৭টি চোরাই সিএনজি, ০৬টি চোরাই অটোরিক্সা ও ০২টি মোটরসাইকেল উদ্ধার।
মামলার বাদী নুরুল ইসলাম (৩৯), পিতা- মৃত আব্দুল ওহাব, সাং-সাবেক পাড়া, থানা-চৌদ্দগ্রাম, জেলা-কুমিল্লা এর চালিত সিএনজি গাড়ী যার ইঞ্জিন মং ও চেসিস নং-00837। গত ১৭/০৮/২০১৩ খ্রিঃ সন্ধ্যার দিকে বর্ণিত সিএনজি গাড়িটি চৌদ্দগ্রাম থানাধীন কাশিপুর থেকে অজ্ঞাতনামা চোর চক্র কর্তৃক চুরি হয়। অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন যে, অজ্ঞাতনামা সিএনজি চোর চক্র যাত্রী বেশে কুমিল্লা যাওয়ার কথা বলে গাড়িতে উঠে। তারে নিয়ে কাশিপুর রাস্তার মাথা হতে চট্টগ্রাম টু ঢাকা মহাসড়কে উঠে কুমিল্লা শহরে যাওয়ার পথে উক্ত অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জন যাত্রীরা কৌশলে তাকে সিগারেট আনার কথা বলে রেস্টুরেন্ট এর ভেতরে থাকা কফি শপ দোকানে পাঠিয়ে সিএনজি গাড়িটি চুরি করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় বাদী হয়ে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে চৌদ্দগ্রাম থানার মামলা নং-২০, তারিখ-১২/১০/২০২৩খ্রিঃ, ধারা-৩৭৯ পেনাল কোড রুস্তু করা হয়।
এমতাবস্থায় কুমিল্লা জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বিপিএম (বার) মহোদয়ের সার্বিক নির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), কুমিল্লার একটি চৌকস টিম চোর চক্র সনাক্তকরণ ও চোরাই সিএনজি উদ্ভাবে সর্বাত্মক অভিযান পরিচালনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), কুমিল্লার আভিযানিক দলটি এসআই (নিরস্ত্র) মোঃ বিল্লাল হোসেন এবং এসআই/ সৈয়দ দেলোয়ার হোসেন এর নেতৃত্বে গোপন সংবাদ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে কোতয়ালী মডেল থানাধীন খেতাসার হতে সক্রিয় চোর চক্রের সদস্য হেমায়েত উল্লাহ @ মনির (৩৮) কে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে, সে দীর্ঘ দিন যাবৎ বিভিন্ন এলাকা হতে সিএনজি অটোরিক্সা চুরি করে বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে ক্রয় বিক্রয় করছে। ইতোপূর্বে একাধিক চোরাইকৃত সিএমলি/অটোরিক্সা চোর চক্রের সদস্য মোঃ জালাল উদ্দিন (৪০) এর নিকট বিক্রয় করেছে। হেদায়েত উল্লাহর তথ্য মতে, কোতয়ালী মডেল থানাধীন পাঁচধুরী ইউপির গোলাবাড়ী বাজারস্থ (ধর্মনগর চৌমুহনী) হারুন ম্যানশন মার্কেট থেকে আসামী মোঃ জালাল উদ্দিন (৪০) কে তার নিজ গ্যারেজ হতে আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদে তার গ্যারেজের সামনে থেকে ০৬টি চোরাই সিএনজি অটোরিক্সা উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে আরো জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, চোর চক্র ও চোরাই সিএনজি/অটোরিক্সা ক্রয় বিক্রয় চক্রের সদস্য মোঃ অহিদুর রহমান অহিদ (৩২), নাছির উদ্দিন (২৬), মোঃ সোহেল (৩৫), মোঃ তৌকির হোসেন (৩২) দের নিকট চোরাইকৃত সিএনজি অটোরিক্সা বিক্রয় করেছে। এমতাবস্থায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে ১২/১০/২৩ খ্রিঃ তারিখ রাত ০৩:২৫ ঘটিকায় মুরাদনগর থানাধীন বাখরানগর হতে উপরিউক্ত অভিযুক্ত মোঃ অহিদুর রহমান @ অহিদ (৩২ নাছির উদ্দিন (২৬), মোঃ সোহেল (৩৫), মোঃ তৌকির হোসেন (৩২) দেরকে একটি রেজিঃ নম্বরবিহীন সিএনজি অটোরিক্সাসহ গ্রেফতার করে। যাচাই করে দেখা যায়, তাদের নিকট থাকা বহনকৃত সিএনজি অটোরিক্সা চোরাইকৃত, যার কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। ০১টি সিএনজি অটোরিক্সা উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে চোরাই চক্রের অন্যতম সদস্য হেদায়েত উল্লাহ মনির (৩৮) কে নিবিড় ভাবে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে চোর চক্রের আরো কয়েকজন সদস্যর নাম বলে এবং তাদের কাছে চোরাই অটোরিক্সা এবং মোটর সাইকেল রয়েছে মর্মে জানায়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নিয়া অভিযান পরিচালনা করে উক্ত চক্রের সদস্য মোঃ ইমদাদুল হক @ জাহাঙ্গীর (৫০),কে দেবিদ্বার থানা এলাকা থেকে এবং আবু তাহের কে চান্দিনা থানাধীন মহিচাইল এলাকা হতে গ্রেফতার করে। তারা অপরাধের দায় স্বীকার করে জানায় যে, তার নিকট থাকা চোরাইকৃত ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা, মোটর সাইকেলগুলো মোঃ রুকুনুজ্জামান (৪২), মান্নান মিয়া (৫২), মোঃ ফজলু মিয়া (৪০), আসামী মোঃ বাবুল সরকার (৪৬)দের নিকট বিক্রয় করেছে। মোঃ বাবুল সরকার (৪৬) চোরাইকৃত ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ক্রয় করতঃ সে তার গ্যারেজ বিভিন্ন পার্টস/যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করে বিক্রয় করে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে পুনরায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে চক্রের সদস্য মোঃ রুকুনুজ্জামান (৪২), মান্নান মিয়া (৫২), মোঃ ফজলু মিয়া (৪০)দেরকে ১২/১০/২০২৩খ্রিঃ তারিখ সকাল ০৬:৫৫ ঘটিকায় দাউদকান্দি মডেল থানাধীন তুজারভাঙ্গার মান্নান মিয়া (৫২), এর গ্যারেজ হতে গ্রেফতার করে এবং ০৩টি ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা উদ্ধার করে জব্দ করে। পরবর্তীতে মোঃ বাবুল সরকার (৪৬)কে ১২/১০/২০২৩খ্রিঃ তারিখ সকাল ০৮:২০ ঘটিকায় হোমনা থানাধীন কাশিপুরস্থ তার অটোরিক্সা গ্যারেজ হতে আটক করা হয়। মোঃ বাবুল সরকার (৪৬) এর স্বীকারোক্তি মতে, তার গ্যারেজ হতে চোরাই অটোরিক্সা ০৩টি ও মোটর সাইকেল ০২টি এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশসমূহ উদ্ধার করা হয়।
মূলত গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা সবাই আন্তঃজেলা সিএনজি ও অটোরিক্সা চোর চক্রের সদস্য। তারা কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন থানা ও পার্শ্ববর্তী জেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সিএনজি, অটোরিক্সা ও মোটরসাইকেল চুরি করে ক্রয় বিক্রয় করে। মান্নান ও বাবুল সরকারের গ্যারেজে এনে নম্বর প্লেট খুলে, বডি পরিবর্তন করে ও রং পরিবর্তন করে বিভিন্ন লোকজনের নিকট বিক্রয় করে মর্মে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। চোরাই মালামাল (সিএনজি, অটোরিক্সা ও মোটরসাইকেল) দখলে রাখার ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই / বিপ্পাল হোসেন বাদী হয়ে পৃথক একটি অভিযোগ দায়ের করলে কোতয়ালী মডেল থানার মামলা নং-৪৬, তারিখ- ১২/১০/২০২৩খ্রিঃ, ধারা-৩৭৯/৪১৩/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়।