টানা তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। আর এই সামরিক অভিযান নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে মস্কো। এই পরিস্থিতিতে সামনে এসেছে নতুন বিতর্ক।
আর সেই বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন রাশিয়ার একজন টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, ইউক্রেনের পর রাশিয়ার উচিত যুক্তরাজ্যে আক্রমণ চালানো। এমনকি দেশটিতে আক্রমণের পর মস্কোকে ঐতিহাসিক স্টোনহেঞ্জ দখলে নিতেও দেখতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (৩১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার আলোচিত ওই টেলিভিশন ব্যক্তিত্বর নাম ভ্লাদিমির সলোভিভ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং তিনি ‘পুতিনের কণ্ঠ’ নামে পরিচিত। তিনি বলেছেন, রাশিয়া ব্রিটেন আক্রমণ করতে পারে এবং ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাসকে টার্গেট করতে পারে।
ইভনিং উইথ ভ্লাদিমির সলোভিভ নামে রাশিয়া-১ অনুষ্ঠানে কথা বলার সময় উপস্থাপক দাবি করেন, রাশিয়ার আক্রমণ ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ারের স্যালিসবারিতে অবস্থিত ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক স্টোনহেঞ্জ পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে।
রাশিয়া থামার আগে কতদূর যেতে ইচ্ছুক; ইউক্রেনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ভাসিল ভাকারভের এমন প্রশ্নের জবাবে সলোভিভ জানান, ‘আচ্ছা, যখন আমাদের এগোতে হবে, তখন (যতটা প্রয়োজন) আমরা যাবো।’
সলোভিভের উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলছে, আমরা কোথায় থামব? যেমনটি আমি আজ বলছিলাম, হয়তো স্টোনহেঞ্জ। (কারণ) লিজ ট্রাস বলেছেন যে, তিনি এই যুদ্ধ লড়ছেন। এমনকি সলোভিভ এটিও দাবি করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে যে, ক্রেমলিনের নেতার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ আক্রমণ করা উচিত।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্যের উইল্টশায়ার কাউন্টিতে বিশাল সমতল ভূমিতে খাড়া পাথরের তৈরি এক বিস্ময়কর স্থাপনা ‘স্টোনহেঞ্জ’ নামে পরিচিত। বিশাল এই পাথরখণ্ডগুলো প্রায় ১৩ ফুট উচ্চতার এবং ধূসর বর্ণের এসব পাথর জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্যে বিন্যস্ত করা।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করতে নারাজ। আর এ কারণেই রুশ মিডিয়ার তার যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। গত মাসে জার্মানিতে একটি বৈঠকে জি-৭ এবং ন্যাটো নেতাদের ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ক্রেমলিন নেতা (প্রেসিডেন্ট পুতিন) ‘বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে অপমান করছেন’।
নিউজ উইকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, লিজ ট্রাস আরও বলেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন যেন ইউক্রেনে পরাজিত হন এটি আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আর এটি হলে তিনি আর কোনো সুবিধা পাবেন না এবং শেষ পর্যন্ত আরও আগ্রাসন চালানো থেকে তাকে বিরত রাখবে।’
অবশ্য রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভিতে ব্রিটেন বা ইউরোপকে সাধারণভাবে হুমকি দেওয়ার এটাই প্রথম ঘটনা নয়। গত এপ্রিল মাসে ভ্লাদিমির সলোভিভ যুক্তরাজ্যকে সারমাট ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে পারমাণবিক হামলার সম্ভাবনা নিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন।
নিউজউইকের মতে, সলোভিভ তার শোতে বলেছিলেন, ‘এক সরমাট মানে মাইনাস ওয়ান গ্রেট ব্রিটেন কারণ তারা একেবারেই বর্বর হয়ে গেছে।’
এছাড়া সাবেক রাশিয়ান এমপি ইউরি শ্যাভিটকিনও পৃথকভাবে দাবি করেছিলেন যে, মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে ‘দুই মিনিটের মধ্যে পুরো যুক্তরাজ্যকে’ নিশ্চিহ্ন করতে পারে।