গত প্রায় দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ডিজেলের জন্য হাহাকার চলতে থাকা শ্রীলঙ্কায় অবশেষে পৌঁছেছে এই জ্বালানি তেল। শনিবার ৪০ হাজার টন ডিজেল নিয়ে একটি জাহাজ শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর বন্দরে পৌঁছেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
এই ৪০ হাজার টন ডিজেলের দাম পড়েছে ১০০ কোটি ডলার। এ অর্থ দিয়েছে ভারত। শনিবার সন্ধ্যার মধ্যেই রাজধানী থেকে দেশের সব এলাকায় ডিজেল পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারা।
পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জ্বালানি কিনতে পারছিল না শ্রীলঙ্কা; কিন্তু ডিজেলের অভাবে গত প্রায় দু’সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছিল দেশটির স্বাভাবিক জনজীবন।
ডিজেলের অভাবে দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছিল, ফলে গত প্রায় এক মাস ধরে প্রতিদিন ১০-১২ এমনকি ১৩ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন থাকতে বাধ্য হয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপদেশের সাধারণ মানুষজন।
একই কারণে প্রায় অচল হয়ে পড়েছিল দেশটির গণপরিবহন ব্যবস্থা। বৃহস্পতিবার থেকে একেবারেই অল্পসংখ্যক বাস চলছে দেশটিতে; এবং যেসব বাস চলেছে, তার প্রায় সবই সরকারি।
ডিজেল ও বিদ্যুতের অভাবে দেশটির অধিকাংশ হাসপাতাল সার্জারি বন্ধ রেখেছিল। এমনকি দেশেটির সড়কবাতিগুলো পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য।
এখন ডিজেল এসে যাওয়ায়, এসব সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎমন্ত্রী পাভিত্রা ওয়ানিয়ারাচ্চি অবশ্য শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন যে, শনিবারের মধ্যে ডিজেলের চালান আসছে দেশটিতে; তবে তিনি এও বলেছিলেন, সেই চালান এলেই লোডশেডিংয়ের সমস্যা সম্পূর্ণ মিটে যাবে— এমন নয়।
‘ডিজেলের এই চলানটি এলে আমরা লোডশেডিং কমাতে পারব, কিন্তু আগামী মে মাসের আগ পর্যন্ত এই সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব হবে না,’— সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন তিনি।
দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়া শুরু করে ২০১৬ সাল থেকে। ওই বছর দীর্ঘ খরার কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় শ্রীলঙ্কার কৃষি উৎপাদন এবং ইস্টার সানডেতে মুসলিম জঙ্গীগোষ্ঠীর বোমার আঘাতে প্রায় ৩০০ জন মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত পর্যটনশিল্প। অনেক বিদেশি পর্যটক শ্রীলঙ্কায় আসার পরিকল্পনা বাতিল করেন।
সেই ক্ষতি যখন সামলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটি, সে সময়েই হানা দেয় করোনা মহামারি— যার প্রভাবে দীর্ঘ দুই বছর প্রায় বন্ধ ছিল পর্যটন খাত। ফলে দেশটির রিজার্ভের মজুতে টান পড়ে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ একেবারে কমে যাওয়ায় সেই মজুত আর বাড়ানো যায়নি। বর্তমানে বাইরের বিভিন্ন রাষ্ট্রের কাছে শ্রীলঙ্কার আর্থিক ঋণের পরিমাণ ৫১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
তবে দেশের সাম্প্রতিক এই দুরাবস্থার জন্য সরকারের অব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করেছেন কলোম্বোভিত্তিক থিংক ট্যাংক সংস্থা অ্যাডভোকাটা ইনস্টিটিউটের মুরতাজা জাফেরজি।
এএফপিকে তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে বাজেট ঘাটতি, মহামারির আগে অযৌক্তিক কর কাটছাঁট এবং ধনী শ্রীলঙ্কানদের সুবিধা দেওয়ার জন্য সামঞ্জস্যহীনভাবে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য পরিষেবাখাতে যথেচ্ছ ভর্তুকি দেওয়ার ফলাফলই বর্তমানের এই দুর্বিষহ অবস্থার মূল কারণ।
সূত্র: এনডিটিভি