সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত উপ-কমিটির প্রধান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ. ওয়াই মশিউজ্জামান বলেছেন, আওয়ামী লীগের সুপ্রিম কোর্টের নেতাদের সামনেই তাদের কর্মীরা আমাকে ঘেরাও করে রেখে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। কিন্তু নেতারা তাদের থামানোর জন্য কোনো উদ্যোগ নেননি।
তিনি বলেন, নেতারা প্রতিবাদ করেননি। এটা আমাকে খুবই কষ্ট দিয়েছে। আমার জীবনে এ রকম নোংরামি কখনও দেখিনি। এ কারণে পদত্যাগ করেছি। শনিবার রাতে গণমাধ্যমের কাছে তিনি এসব কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে এ. ওয়াই মশিউজ্জামান বলেন, আমি সম্পাদক পদে ভোট পুনর্গণনার কথা কখনও বলিনি। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে তিনটায় বলেছিলাম, তারা যে ভোট পুনর্গণনার আবেদন করেছেন, শুক্রবার বিকেল তিনটায় উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে সেই আবেদন নিষ্পত্তি করব। তখন এ কথা না বললে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারতাম না। আমাকে ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। বলতে পারেন জান বাঁচানোর জন্য ওই কথা বলে চলে এসেছি। যদিও ভোট গণনার আবেদন নিয়ে তখন আমার কিছু বলার এখতিয়ার ছিল না। কারণ তার আগে রাত একটায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম।
কী হয়েছিল সেদিন রাতে
প্রত্যক্ষদর্শী অন্তত ১০ জন আইনজীবী জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের ভোট গণনা শেষ হয়। গণনা শেষে দেখা যায়, সভাপতিসহ ছয়টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল ও সম্পাদকসহ আটটি পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল বিজয়ের পথে।
সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আওয়ামী লীগের প্রার্থী থেকে অল্প ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার প্রস্তুতি নিলে সম্পাদক পদে ভোট পুনরায় গণনার দাবি তোলেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। তারা সম্পাদক পদে ভোট কারচুপি ও বাতিল হওয়া ভোট কাজলের পক্ষে গণনা করার অভিযোগ আনেন।
নির্বাচন কমিশনের প্রধান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ. ওয়াই মশিউজ্জামান অভিযোগ নাকচ করে ফল ঘোষণা করতে অনড় থাকলে মিছিল, স্লোগান ও হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ব্যাপক হইচই শুরু করেন।
এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সম্পাদক প্রার্থী আব্দুন নূর দুলাল লিখিতভাবে ভোট পুনরায় গণনার আবেদন করেন। আবেদন গ্রহণ না করলে নির্বাচন কমিশনের প্রধান এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে পদত্যাগ করতে বলেন আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা। তার পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়।
উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে রাত সাড়ে তিনটার দিকে নির্বাচন পরিচালনায় গঠিত কমিটির প্রধান এ. ওয়াই মশিউজ্জামান সম্পাদক পদে ভোট পুনরায় গণনার আবেদন নেন ও ভোটের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত করেন। ওই সময় তিনি জানান, শুক্রবার বিকেল তিনটায় দুই সম্পাদক প্রার্থীর উপস্থিতিতে ভোট পুনরায় গণনার করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কিন্তু গতকাল (শুক্রবার) অ্যাডভোকেট এ. ওয়াই মশিউজ্জামান সুপ্রিম কোর্ট বারে আসেননি। এ কারণে ভোট পুনর্গণনার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে পাঁচ হাজার ৯৮২ জন আইনজীবী ভোট দেন। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে রাত প্রায় একটা পর্যন্ত চলে ভোট গণনা।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নির্বাচনী সাব কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতিসহ ছয়টি পদে আওয়ামী লীগের সাদা প্যানেল ও সম্পাদকসহ আটটি পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন। সভাপতি পদে সাদা প্যানেলের অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক পদে নীল প্যানেলের ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এগিয়ে।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল থেকে এগিয়ে থাকা অন্য পাঁচজন হলেন, সহ-সভাপতি পদে সহ-সভাপতি পদে মো. শহীদুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হোসেন, সদস্য পদে ফাতেমা বেগম, সাহাদত হোসাইন রাজিব ও সুব্রত কুমার কুন্ডু।
বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে এগিয়ে থাকা অন্য সাতজন হলেন, সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজ বিন ইউসুফ ও মাহবুবুর রহমান খান, ট্রেজারার মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সদস্য ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী, গোলাম আক্তার জাকির, মো. মনজুরুল আলম সুজন ও কামরুল ইসলাম।