নিজস্ব প্রতিবেদক (বাদশা):
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা আলীরটেক, কুতুবপুর, বক্তাবলী, ফতুল্লা, কাশীপুর, গোগনগর ও এনায়েতনগর এই সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই সাত ইউনিয়নে নির্বাচন আসন্ন। তবে পূর্বের মতোই সিলেকশন হবে নাকি ইলেকশন হবে সে নিয়ে চলছে জোর আলোচনা।
গত নির্বাচনে সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সিলেকশনে নির্বাচিত হয়েছেন চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থী। প্রভাবশালী একটি মহলের প্রভাবে দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে গত নির্বাচনে। এবারের নির্বাচনকে গুরুত্ব দিচ্ছে রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ জনগণ।
গত ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়। তবে ভোটগ্রহণের পূর্বেই বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় জয় পায় কাশীপুর, বক্তাবলী ও আলীরটেক ইউনিয়নের তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী। তারা তিনজনই আওয়ামী লীগের সমর্থনে পেয়েছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে কাউকে দাড়াতে দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ ২৯ বছর যাবৎ মামলা জটিলতার কারণে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় না। এই ইউপির চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার পর ১০ বছর যাবৎ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মাধ্যমেই চলছে কার্যক্রম।
গত নির্বাচনে কুতুবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে জয় পান ফতুল্লা থানা বিএনপির সহসভাপতি মনিরুল আলম সেন্টু। যদিও তিনি ধানের শীষের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। অভিযোগ ছিল, আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে মধ্যস্থতায় ধানের শীষ প্রতীক নেননি সেন্টু। ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী থাকলেও বিএনপির কোনো প্রার্থী ছিল না। ওই নির্বাচনে ৪২ হাজার ৯০৩ ভোট পেয়ে তৃতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সেন্টু। তার নিকটতম প্রতিদ্বদ্বী নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম রসুল শিকদার পেয়েছিলেন মাত্র ১০ হাজার ৯৮৭ ভোট। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় দলীয় প্রার্থীকে হারানো এবং বিএনপি নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার পেছনের পুরো কলকাঠি নেড়েছিল প্রভাবশালী মহলটি। কুতুবপুর ইউনিয়নে এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা একাধিক মামলার আসামি মীর হোসেন মীরু। আলোচনায় রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জসিমউদ্দিন, ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক ও বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লা।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা গোগনগর ইউপি নির্বাচনেও বিজয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থী নওশেদ আলী। তিনি পেয়েছিলেন ৭ হাজার ৪৪১ ভোট। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে দেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বদ্বী ছিলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জসিমউদ্দিন। তিনি ওই নির্বাচনে পেয়েছিলেন ৫ হাজার ২৭১ ভোট। এই নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মীর তেমন তোড়জোড় ছিল না বলেও অভিযোগ রয়েছে। নওশেদ আলী চেয়ারম্যান মারা যাওয়ায় এবার ইউপি নির্বাচনে তার ভাই ব্যবসায়ী ফজর আলী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে।
এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহসভাপতি আসাদুজ্জামান। ওই নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক আলমগীর ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান। এবারও তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
কাশীপুর ইউনিয়নে প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান প্রার্থী হন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদল। এই নির্বাচনে সাবেক চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের তৎকালীন দপ্তর সম্পাদক মোমেন শিকদার অংশ নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। অনুসারী নেতাকর্মীরা প্রচারণাও চালায়। পরবর্তীতে প্রভাবশালী মহলের চাপে এবং দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে সরে দাড়ান তিনি। তবে এবার আওয়ামী লীগ থেকেই একাধিক নেতার নাম আলোচনায় এসেছে। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশরাফুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক মোমেন শিকদার, কাশীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আইয়ুব আলী রয়েছেন আলোচনায়। বিএনপি থেকে রয়েছেন কাশীপুর ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ওমর আলী, এক নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ডালিম শিকদার।
কাশীপুরের মতো একইভাবে বক্তাবলীতে গতবার বিনা প্রতিদ্বদ্বীতায় জয় পান ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী। এবার তেমনটা না হবার বেশ সম্ভবনা রয়েছে। বিএনপি থেকে একাধিক ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা চিন্তা করছেন। তালিকায় রয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকবর আলী সুমন, সহসভাপতি আলাউদ্দিন বারী, সাধারণ সম্পাদক আলামিন সিদ্দিকী। গতবারও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। আকবর আলী সুমন দলীয় মনোনয়নও পেয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হুমকি ও প্রভাবের কারণে পরে সরে যান তারা। এবার প্রার্থীতার ইচ্ছা রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও একাধিক নেতার।
নৌকা প্রতীকে বিনা প্রতিদ্বদ্বীতায় বিজয়ী হন আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি। তার বিপরীতে সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসাইনের জনপ্রিয়তা থাকলেও প্রভাবশালী মহলের চাপে তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি। এবার নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী মাঠে। ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান পদে সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসাইন, সায়েম আহমেদ, আক্তারউজ্জামান গণসংযোগ করছেন।
একটি প্রতিদ্বদ্বীতাপূর্ণ নির্বাচনের দাবি সাধারণ ভোটার ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর। প্রার্থী যে দলেরই হোক সিলেকশন না হয়ে অন্তত ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ চান প্রতিটি ইউনিয়নের সাধারণ ভোটাররা।