রাজধানী ঢাকা ইট পাটকেলে ঘেরা অলিগলির এ খিলগাঁর একটি বাড়িতেই ধীরে ধীরে বড় হয় । ছদ্মনাম রুনার বয়স যখন ১৪ উকি দিচ্ছিল ঠিক সেই সময় একটি প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্চা সেবি হিসাবে মানব সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করে। চারদিকে যখন তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে তখন ছদœমনাম রুনাকে বাবু নামে এক যুবক তাকে পাগলের মত করে ভালোবাসে, ঘর বাধার স্বপ্ন দেখায়। এক সময় বাবুর ভালোবাসার কাছে হার মেনে নিজেকে বাবুর সঙ্গিনী হিসেবে বাবুর হাত ধরে পালিয়ে যেয়ে বাবা-মার চোখ ফাকি দিংে বাবুর সাথে বিয়ের পিরিতে বসে। বাবুর দেখানো স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে রিতিমত তাদের সুখের সংসার গড়ে উঠে। এরই মধ্যে তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তান আসে। এভাবে তাদের সংসার কেটে যায় প্রায় ১৫বছর। হঠাৎ করে তাদের সংসার জীবনে একটি ঝড় নেমে আসে শুরু হয় অশান্তি আর বাবু অন্য আরেকটি মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে আনিসা নামের এক মেয়ে সাথে দ্বিতীয় বিয়েতে আবদ্ধ হয়। এদিকে রুনার সংসার ভেঙ্গে যায়। তার শিশু সন্তান ¯্রােতকে নিয়ে বাচার তাকিদে জীবিকা নির্বাহের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে। এরইমধ্যে পরিবার থেকে রুনাকে অন্যত্র বিয়ে বসার জন্য চাপ সৃষ্টি হয়, রুনা বিয়েতে রাজি না হওয়াই এক পর্যায়ে খালাতো বোন রিতা আক্তার (৪০) ফুসলাইয়া বিয়েতে রাজি করায়। গত ২২/১০/২০২০ইং তারিখ বাদীর বাসায় বর তানিম রেজা বাপ্পি, পান্নু হাওলাদার, ইউসুফ রিপন, কাজী তোফাজ্জল হোসেন, জাভেল হোসেন পাপন, মোঃ জামাল, মোঃ রাকিবুল হাসান, আলেয়া, মামলার আসামীগণের উপস্থিতিতে বিবাহের নাটক সাজাইয়া বাপ্পির সহিত ছদ্মনাম রুনার সাথে নাটকীয় বিবাহ করানো হয়। তাতে বাদির বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষরও নেন। পরবর্তীতে বাদিকে নিয়া বাপ্পি ভিক্টিমের পিতার ভাড়াকৃত বাসায় উঠে। তার স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বসবাস করতে শুরু করে। বিবাহের ২মাস অবিবাহিত হওয়ার পর আসামীর চলাফেরা ও কথাবার্তায় আচার-আচরণে ভিক্টিমের সন্দেহ হয় যে, তখন ছদ্ম নাম রুনা তার স্বামী বাপ্পির কাছে তাদের বিবাহের কাবিন নামার কথা বলিলে নানা তালবাহানা করে এরিয়ে যান, দেয়-দিচ্ছি বলে ঘুড়াইতে থাকে। এনিয়া তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনমালিন্য হয়, এক পর্যায়ে বাপ্পি ছদ্মনাম রুনাকে ব্যাপক মার-ধর ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। এমতাবস্থায় কাজি তোফাজ্জল হোসেন-এর কাজী অফিসে গিয়ে তাদের বিবাহের কাবিননামা চাইলে কাজী জানান যে, বাপ্পি ও তাদের কাজী বিবাহ পড়ান নাই এবং কোন কাবিননামও হই নাই। এ বলে ভিক্টিমকে কাজী অফিস হতে তাড়িয়ে দেন। তখন ছদ্মনাম রুনা বুঝতে পারেন তার সাথে মিথ্যে বিয়ে সাজিয়ে দিনের পর দিন তানিম রেজা বাপ্পি তার দেহটি ভোগ-পন্য হিসাবে ব্যবহার করেছে। এরমধ্যেই বাপ্পি আত্মগোপন করে মাঝে মধ্যে ভিক্টিমের সাথে ফোনে কথা বলে। একপর্যায়ে ভিক্টিমকে পুনরায় বিয়ে করে ঘর-সংসার বাধার স্বপ্ন দেখায় এবং বাপ্পির ভূল স্বীকার করে এবং তার এক আত্মীয়র বাসায় নিয়ে নতুন করে ছদ্মনাম রুনাকে বিয়ে করার কথা বলিয়া গত ১৩/০২/২০২২ইং তারিখে রাত অনুমান ৯.০০ ঘটিকার সময় হাতিরঝিল থানাধীন উলোন রোডস্থ, রামপুরা পাকা জামে মসজিদ এর পাশে ২৯২ হোল্ডিংয়ে একটি ফ্ল্যাটে তার আত্মীয় পরিচয়দান কারী আলেয়ার বাসায় গিয়ে আরো ৫জন মেয়েকে দেখতে পান। যাদের নাম-রিনা, মনি, হ্যাপী, জুই, মলিনা তাকে ১রুমে বসিয়ে বাহিরে গিয়ে পাপন ও জামালকে নিয়ে আসে এবং তার বন্ধু পরিচয় করিয়ে দেন। একপর্যায়ে ভিক্টিমকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে দরজা বন্ধ করিয়া জোরপূর্বক একের পর এক তিনজনে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে এবং উক্ত রুমে থাকা আলেয়া বাপ্পির হুকুমে ধর্ষণের চিত্র মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। ভিক্টিম শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন একপর্যায়ে ঘটনাস্থল হতে কৌশলে বের হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান এবং ৯৯৯ ফোন দিলে রামপুরা থানা পুলিশ ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে যেয়ে ভিক্টিমকে হাসপাতালের ও.সি.সি বিভাগে ভর্তি করান। ভিক্টিম ১৪/০২/২০২২ইং তারিখ রাত অনুমান ৩.৪৫ ঘটিকার সময় থেকে ১৬/০২/২০২২ইং তারিখে সকাল ১০.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসা শেষে ১৬/০২/২০২২ইং তারিখ রাত ৭.৩০ ঘটিকার সময় হাতিরঝিল থানায় গিয়ে থানা কর্তব্যরত কর্মকর্তার নিকট ঘটনার বিবরণ জানিয়ে একটি লিখিত এজাহার দেন। এজাহার পেয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি তদন্ত, ওসি অপারেশন, এস.্আই শরীফুল, এ.এস.আই চয়ন বাদির অভিযোগ গ্রহন করে প্রায় ২ঘন্টা বাদিকে থানায় বসিয়ে রেখে একপর্যায়ে ঘটনা স্থলে অভিযান পরিচালনা করেন। ঘটনাস্থল থেকে আলেয়া, বাপ্পি ও রাকিবুলসহ আরো কয়েকজন মহিলাকে গ্রেফতার করেন। এবং ঘটনাস্থলের আশ-পাশের ভাড়াটিয়া বাড়ির মালিক বিভিন্ন স্বাক্ষীদের জিজ্ঞাসাদে পুলিশ ঘটনার সত্যতা পান। অথচ গণধর্ষণ হওয়ার কোন আলামত উদ্ধার না করে শুধু ৩জন মহিলাকে থানায় নিয়ে যান বাকিদের ঘটনা স্থল থেকে ছেড়ে দেন। থানায় যাওয়ার পর এজাহার দায়েরকারী ভিক্টিমকে মামলা না করার জন্য অনুরোধ করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ওসি তদন্ত, ওসি অপারেশন, এস.আই শরীফুল, এ.এস.আই চয়নদের কথায় বাদি রাজি না হয়ে ন্যায় বিচারের স্বার্থে মামলা করতে চাইলে আসামীগণ বাদির উপর ক্ষিপ্ত হোন। বাদিকে ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা দিতে চান উহাতে বাদি সম্মত না হওয়াই পুলিশ আসামীগণ, অন্যান্য আসামীগণের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকষ গ্রহণ করে তাদের ছেড়ে দেন এবং বাদির মামলা গ্রহণ না করে কয়েকটি সাদা কাগজে বাদির স্বাক্ষর রেখে বাদিকে হুমকি দিয়ে ভয়-ভাতি দেখিয়ে রাত ১৭/০২/২০২২ইং তারিখ ১২.৩০ ঘটিকার সময় থানা তকে বের করে দেন। রাত প্রায় অনুমান ১.০০ঘটিকার সময় বাসায় যাওয়ার পথে খিলগাঁও এলাকায় পৌছানো মাত্র তানিম রেজা বাপ্পি, ইউসুফ রিপন, জাভেল হোসেন পাপনসহ অজ্ঞাতনাম আরো বাদির গতিরোধ করে ছদ্মনাম রুনাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। রিক্সা চালক ও পথচারীদের এগিয়ে আসলে ভিক্টিমকে হত্যা ও গুম করে ফেলাসহ নানা ধরনের ক্ষতি সাধনের হুমকি দিয়ে চলে যায়। এবিষয়ে ১৭/০২/২০২২ইং তারিখ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, মহাপুলিশ পরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার বরাবরে ঘটনার বিষয় উল্লেখ করে ন্যায় বিচারের স্বার্থে অভিযোগ প্রদান করেন। অবশেষে অদ্য ০১/০৩/২০২২ই বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইবুনাল নং-৭, ঢাকায় একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। মামলাটি শুনানি হয় নারী ও শিশু ৩নং আদালতে। যার ধারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৯(৩)/২৪(৩)/৩০। শুনানি শেষে মামলাটি আমলে নেন তবে এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত আদেশ জানা যায়নি। মামলার আসামীরা হলেন- তানিম রেজা বাপ্পি, পান্নু হাওলাদার, ইউসুফ রিপন, কাজী তোফাজ্জল হোসেন, জাভেল হোসেন পাপন, মোঃ জামাল, মোঃ রাকিবুল হাসান, হাতিরঝিল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রশিদ (ওসি), মহিউদ্দিন ফারুক (ওসি তদন্ত), গোলাম আযম (ওসি অপারেশন) এস.আই শরীফুল, এ.এস.আই চয়ন, মোসাঃ আলেয়া।