ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলা গড়িয়েছে পঞ্চম দিনে। মস্কোর এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একে একে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-সহ পশ্চিমা বহু দেশ। এই পরিস্থিতিতে মস্কোর পাল্টা পদক্ষেপের আশঙ্কা করছে ইইউ। সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, রাশিয়ার জ্বালানির ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এর ফলে মস্কো বিপুল পরিমাণ অর্থও আয় করে থাকে। আর এই দু’টি বিষয় থেকে ইউক্রেনে চলমান রুশ হামলা ও এতে করে সৃষ্ট সংকটকে পৃথক করা যাবে না।
গত বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেনে ঢুকে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে এটিকে অন্যতম বড় হামলার ঘটনা হিসেবে বলা হচ্ছে। ইউএনএইচসিআর বলছে, ইউক্রেনে আনুমানিক এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ ইতোমধ্যে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়েছে। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে ৫০ লাখ পর্যন্ত মানুষ ইউক্রেনে ঘরছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা সংস্থাটির।
রুশ সেনাদের হামলার মুখে পিছিয়ে নেই ইউক্রেনও। তীব্র আক্রমণের মুখে সক্ষমতা অনুযায়ী পাল্টা প্রতিরোধের চেষ্টাও করছে তারা। এতে করে সামরিক-বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও অনেক বলেই খবর প্রকাশ করা হচ্ছে। আর এতেই মূলত রাশিয়ার বিরুদ্ধে একে একে কঠোর সব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে পশ্চিমারা।
বিবিসি বলছে, ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর সব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সর্বশেষ রোববার মস্কোর বিরুদ্ধে একগুচ্ছ নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সংস্থাটি। এই নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে লক্ষ্যবস্তু করাসহ রাশিয়ার এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য ইউরোপের আকাশ বন্ধ করা এবং ইউক্রেনের সমর্থনে অস্ত্র কেনা এবং সেগুলো দেশটিতে পাঠানোর কথা জানানো হয়।
তবে এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- রাশিয়ার অন্যতম একটি গ্যাস পাইপলাইনের অনুমোদন জার্মানি স্থগিত করা ছাড়া মস্কো থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জ্বালানি আমদানি একটুও কমায়নি।
এমনিতেই ইউরোপজুড়ে জ্বালানির দাম এখন অনেক বেশি। এখন যদি জ্বালানির সংকট শুরু হয় তাহলে মহাদেশজুড়ে এর দাম ছুটবে রকেটের গতিতে। এটা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও বেশ ভালোই জানেন।
আর মূল সমস্যাটা এখানেই। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একের পর এক কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ব্রাসেলস এখন ভয় পাচ্ছে যে, রাশিয়া হয়তো তাদের বিরুদ্ধ পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে। প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়া হয়তো ইউরোপে গ্যাস রপ্তানি স্থগিত করতে পারে কিংবা কমিয়ে দিতে পারে।
আর এই কারণে রাশিয়ার ওপর ব্যাপকভাবে জ্বালানি নির্ভরতা বন্ধ করা এবং অন্যান্য উপায়ে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামনে এখন অগ্রাধিকার কাজ।