আগ্রাসনের দ্বিতীয় দিনে এসে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে দেওয়া ভাষণে কিয়েভের ক্ষমতাসীন সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে পুতিন বলেছেন, আমি ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সামরিক সৈন্যদের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি: নব্য-নাৎসিদের মেনে নেবেন না এবং (ইউক্রেনের উগ্র জাতীয়তাবাদীদের) আপনাদের সন্তান, স্ত্রী এবং প্রবীণদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে দেবেন না।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা আপনাদের নিজের হাতে নিয়ে নিন, আমাদের পক্ষে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য এটি সহজ হবে।’
রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনারা ‘সাহসিকতা, পেশাদারিত্ব এবং বীরত্বের সাথে’ তাদের দায়িত্ব পালন করছে। তিনি বলেন, কিয়েভের ক্ষমতাসীন ‘একদল মাদকাসক্ত এবং নব্য-নাৎসির’ চেয়ে সেনাবাহিনী আলোচনার ভালো অংশীদার হবে। ইউক্রেনের শাসকরা নিজেদেরকে কিয়েভে আবদ্ধ করেছে এবং জনগণকে ‘জিম্মি’ করে রেখেছে।
এর আগে, শুক্রবার মস্কো এবং কিয়েভ শান্তি আলোচনায় বসতে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কির আলোচনার প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ।
বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে উভয়দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠক হবে— উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে পেসকভ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, লুহানস্ক ও দোনেতস্ককে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতেই মূলত সাম্প্রতিক এই সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।’
তবে ক্রেমলিন বলেছে, তারা আলোচনার জন্য বেলারুশের রাজধানী মিনস্কের কথা বললেও ইউক্রেন পোল্যান্ডের ওয়ারশোর প্রস্তাব করেছে। মস্কো বলেছে, এই প্রস্তাবের পর সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে কিয়েভ।
এর আগে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ জানিয়েছিলেন, মস্কো কিয়েভের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো— ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে এখন পর্যন্ত হতাহত কত?
প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সৈন্যরা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে পৌঁছানোর কারণে দেশটিতে রাশিয়ার আক্রমণের চিত্র দ্রুত পাল্টে যেতে শুরু করেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে ইউক্রেনে সংঘর্ষে হতাহতের অনেক পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। তবে সেসব পরিসংখ্যান নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
• ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, সংঘাতে রাশিয়ার এক হাজারের বেশি সৈন্য নিহত হয়েছে।
• ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীবিষয়ক মন্ত্রী জেমস হিপ্পি বলেছেন, রাশিয়ার ৪৫০ সৈন্য এবং ইউক্রেনের ৫৭ বেসামরিকসহ কমপক্ষে ১৯৪ সৈন্য নিহত হয়েছেন।
• অন্যদিকে, জাতিসংঘ বলেছে, ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৫ বেসামরিক নিহত এবং আরও ১০২ জন আহত হয়েছে।
• রাশিয়া বলেছে, রাজধানী কিয়েভের কাছের প্রধান হোসটোমেল বিমানবন্দর দখলের সময় ২০০ জনের বেশি ইউক্রেনীয় সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ছোট স্নেক আইল্যান্ডে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সময় ১৩ ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত হয়েছে।
• বৃহস্পতিবার ইউক্রেন জানায়, রাশিয়ার আগ্রাসনে ইউক্রেনের ৪০ জনের বেশি সৈন্য নিহত ও আরও কয়েক ডজন আহত হয়েছে।
কিয়েভ শহরের মেয়র বলেছেন, ইউক্রেনের রাজধানী এখন প্রতিরক্ষামূলক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি বলেছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের নির্দেশে অভিযান শুরুর পর বৃহস্পতিবারই রুশ সৈন্যরা কিয়েভের উপকণ্ঠে পৌঁছায়। সেখানে পৌঁছানোর পর হেলিকপ্টার করে রাশিয়ার সৈন্যরা ওবোলোনস্কির কাছের একটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায়।
২০১৪ সালে গণতন্ত্রপন্থী প্রতিবাদকারীদের আন্দোলনের মুখে রাশিয়া-সমর্থিত ইউক্রেনের সরকারের পতন ঘটে। এরপর সামরিক অভিযান চালিয়ে কৃষ্ণ সাগরের উপদ্বীপ ক্রিমিয়া দখলে নেয় রাশিয়া। একই সঙ্গে দেশটির পূর্বাঞ্চলে সরকারি বাহিনীর সাথে লড়াইরত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন জানায় মস্কো।
এর সাত বছর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার আকাশ, স্থল এবং সমুদ্রপথে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাতে রুশ সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেন। ইউক্রেনের বেশিরভাগ শহরে টানা হামলা, গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর রাজধানী কিয়েভে পৌঁছেছে রুশ সৈন্যরা।