ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড লুহানস্ক ও দোনেতস্ককে মস্কো স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার কূটনৈতিক উত্তেজনার পারদ আরেক দফা বেড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া যদি ইউক্রেনে হামলা করে বসে, সেক্ষেত্রে দেশটির রাজাধানী কিয়েভ ত্যাগ করাই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদমির জেলেনস্কির উচিত হবে বলে মনে করছে বাইডেন প্রশাসন।
প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার মনে করে রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা থেকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হলে ইউক্রেনের ক্ষমতাসীন সরকারের উচিত রাজধানী কিয়েভ থেকে সরিয়ে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লেভিভে স্থানান্তর করা এবং প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির উচিত কিয়েভ ত্যাগ করে লেভিভে গিয়ে বসবাস করা।
সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনে আলাপ হয়েছে ভলোদমির জেলেনস্কির। সে সময় বাইডেনও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে একই পরামর্শ দিয়েছেন বলে এনবিসি নিউজকে নিশ্চিত করেছেন হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা।
মার্কিন কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে ৫০ মাইল দূরে অবস্থিত লেভিভ শহরটি বর্তমান পরিস্থিতিতে কিয়েভের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ নিজেদের দূতাবাস কিয়েভ থেকে লেভিভে সরিয়ে নিয়েছে।
রাশিয়া হামলা করলে তাৎক্ষনিকভাবে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে সম্প্রতি ইউক্রেনের নিরপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের কিছু পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ফোরাম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল। কাউন্সিলের এক মুখপাত্র এনবিসিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে কী কী পরামর্শ ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে— সে সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাননি ওই মুখপাত্র।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এনবিসি, তবে দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজধানী স্থানান্তরের বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে ইউক্রেন প্রশাসনের কোনো কথাবার্তা হয়েছে বলে তারা শোনেননি।
তবে জেলেনস্কির নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা ঠেকানোর প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে দেশটির স্পর্শকাতর আইটি অবকাঠামো এবং সামরিক কমান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু উপাদান ইতোমধ্যে রাজধানী থেকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সোমবার লোহানস্ক ও দোনেতস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই স্বীকৃতিকে তারা বিবেচনা করছেন ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হিসেবে।
আগামী শনিবার মিউনিক সিকিউরিটি কনফারেন্সে অংশ নিতে জার্মানিতে যাচ্ছেন ভলোদমির জেলেনস্কি। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে তার।
তবে কিয়েভের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি মিউনিক সম্মেলনে যোগ দিতে দেশত্যাগ করা বিবেচনাপ্রসূত কোনো সিদ্ধান্ত নয়।