ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর গোলার আঘাতে দেশটির পূর্বাঞ্চলে রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ২ জন বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরআইএ নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
রোববার এই গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে আরআইএ নিউজ এজেন্সি। রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন ইতোমধ্যে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
গত প্রায় এক দশক ধরে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকা রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে আছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সেই এলাকাকে পৃথক একটি দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। সেই দেশের নাম লুহানস্ক পিপল’স রিপাবলিক। যদিও, কিয়েভ এই দেশের অস্তিত্ব কখনও মেনে নেয়নি।
আট বছর আগে কিয়েভ এবং ইউক্রেনের রুশ বিদ্রোহীদের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়; কিন্তু গত দুই মাস ধরে ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ রুশ সেনার উপস্থিতির জেরে ফের দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয়েছে উত্তেজনা।
গত কয়েকদিন ধরে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সংঘাত শুরু হয়েছে। মর্টার, গোলাসহ ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ও রুশ বিদ্রোহীরা; এবং উভয়পক্ষই যুদ্ধবিরতির চুক্তি লঙ্ঘণের জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করছে।
ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার সংকট মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশীরাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই সংকট শুরু হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার পর আরও বেড়েছে এই উত্তেজনা।
গত দুই মাস ধরে রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে ১ লাখেরও বেশি সেনা মোতায়েন রেখেছে রাশিয়া। সম্প্রতি অবশ্য কিছু সৈন্যদল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়; তবে এই বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে সংশয় প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যরাষ্ট্রসমূহ।
ইউক্রেন যেন ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়, মূলত সেজন্য দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টির করতেই সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছিল রাশিয়া। কারণ, ১৯৪৯ সালে গঠিত ন্যাটোকে রাশিয়া বরাবরই পাশ্চাত্য শক্তিসমূহের আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে মনে করে; এবং ঐতিহাসিকভাবেই রাশিয়া পাশ্চাত্য আধিপিত্যবাদের বিরোধী।
এই সংকট সমাধানে সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, যিনি কিছুদিন আগে মস্কোতে গিয়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের আহ্বানের উত্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন জো বাইডেন।