পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলো থেকে স্বল্পমূল্যে অধিকতর সবুজ, টেকসই এবং উন্নত প্রযুক্তি সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) জেনেভায় বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সংক্রান্ত অগ্রাধিকারসমূহ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) আওতায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সম্ভাব্য করণীয় তুলে ধরা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের মানুষের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবহিত করেন। একই সঙ্গে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া কার্যক্রমগুলোও তুলে ধরেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নেওয়া ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানান।
এ সময় মোমেন জলবায়ু পরিবর্তনের অতি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর উন্নয়ন প্রতিবন্ধকতাগুলো অতি দ্রুত নিরসন করার জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। বিশেষ করে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ দেশগুলোর বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাবগুলো প্রশমনের ওপর জোর দেন।
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. এনগোজি ওকোনিও আইওয়েলা, বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থার মহাপরিচালক ড. দারেন তাং, জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার উপ-মহাসচিব ইসাবেল ডুরান্ট, জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থার উপ-মহাপরিচালক হিরোশি কুনিওশি, সিভিএফ সভাপতির বিশেষ দূত মো. আবুল কালাম আজাদ, সাউথ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ড. কর্লোস মারিয়া কোরেয়া এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ভারত ও বার্বাডোসের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বাণিজ্য নীতিগুলো অবশ্যই উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিদ্যমান প্রযুক্তি থেকে টেকসই ও সবুজ প্রযুক্তিতে স্থানান্তরের যথাযথ সুবিধা ও ব্যবস্থা থাকতে হবে। তিনি জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অধিকতর অর্থায়ন ও বাণিজ্য সহায়তা প্রদানের জন্য উন্নত দেশগুলোকে আহ্বান জানান।
বিশ্ব মেধাস্বত্ব সংস্থার মহাপরিচালক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রযুক্তি সহায়তা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।
স্বল্পোন্নত দেশগুলো রপ্তানিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত বিধির ক্ষেত্রে এমন কোনো পদক্ষেপের বিষয়ে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার উপ-মহাসচিব সতর্ক করেন। অর্থায়নের ঘাটতিকে টেকসই পরিবেশের জন্য কাঠামোগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা বলে তিনি চিহ্নিত করেন। তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, বিশেষকরে ঝুঁকিতে থাকা বিশটি (ভি-২০) দেশে অতিরিক্ত অর্থ সহায়তা, পেটেন্ট মুক্ত সবুজ প্রযুক্তি সরবরাহ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থার উপ-মহাপরিচালক কার্বন নিঃসরণ প্রশমনে টেকসই শিল্পায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মো. মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ছাড়াও জলবায়ু, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যোগ দেন।