করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমনের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই টিকা ও অন্যান্য বিধিনিষেধবিরোধী বড় ধরনের বিক্ষোভ চলছে কানাডায়। সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে উত্তর আমেরিকার এই দেশটির পার্লামেন্টের সামনে বিক্ষোভ করছেন মানুষ।
এই পরিস্থিতিতে সপরিবারে রাজধানী অটোয়ার বাসভবন ছেড়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। বিক্ষোভের মধ্যে বাসভবন ছেড়ে পরিবার নিয়ে গোপন জায়গায় চলে গেছেন তিনি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে রোববার (৩০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল ও ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই। এছাড়া কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ট্রুডোর অবস্থান জানাতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের তাণ্ডবে সম্প্রতি কানাডাজুড়ে বেড়েছে করোনার সংক্রমণ ও প্রাণহানি। আর তাই ভাইরাসের অতিসংক্রামক এই ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার মোকাবিলায় সম্প্রতি নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করে কানাডার ক্ষমতাসীন জাস্টিন ট্রুডোর কেন্দ্রীয় সরকার।
নতুন নিয়মে কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত পারাপারের সময় ট্রাক চালকদের করোনা টিকা গ্রহণের সনদ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়। আর এরপরই দেশজুড়ে বিশাল বিক্ষোভ শুরু হয়।
কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণ রুখতে আরোপ করা ভ্যাকসিন ম্যান্ডেট এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক অন্যান্য আরও বিধিনিষেধের কারণে হাজার হাজার ট্রাকচালকসহ বহু সংখ্যক বিক্ষোভকারী শনিবার (২৯ জানুয়ারি) থেকে রাজধানী অটোয়ায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এসময় তারা ভ্যাকসিন ম্যান্ডেট ও অন্যান্য বিধিনিষেধের অবসান দাবি করেন।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ট্রাক চালকদের সংখ্যাই বেশি। মূলত নতুন নিয়মে সীমান্ত পারাপারের সময় টিকা সনদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক ঘোষণার পর থেকেই দেশটির পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল থেকে হাজারও ট্রাকচালক অটোয়ায় পার্লামেন্ট ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন।
এদিকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল জানিয়েছে, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে রাজধানী অটোয়ার বাসভবন ছেড়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তার পরিবার। বিক্ষোভকারীরা ট্রুডোর দফতরের সমানে রাস্তায় বিক্ষোভ অব্যাহত রাখায় বাসভবন ছাড়েন তিনি। অন্দোলনকারীরা কানাডার পতাকা, কুইবেকের পতাকা এবং আমেরিকান পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।
এদিকে আরেক সংবাদমাধ্যম সিবিসি নিউজ জানিয়েছে, নিরাপত্তার কারণে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের অবস্থান নিয়ে কোনো কোনো মন্তব্য করেনি ট্রুডোর কার্যালয়। তবে তার কার্যালয় থেকে অটোয়ার নাগরিকদের বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের একটি এলাকায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন এবং সেখান থেকে দায়িত্বপালন করছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যম দ্য গ্লোব এবং মেইল জানিয়েছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের মধ্যে কিছু সংখ্যক শিশু, বয়স্ক নাগরিক এবং শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষও রয়েছেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে আক্রমণাত্মক এমনকি কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর উদ্দেশ্যে অশ্লীল বাক্যও লেখা রয়েছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের অনেককে অটোয়ার বিখ্যাত ওয়ার মোমোরিয়ালে নাচতেও দেখা গেছে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কানাডার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়েন আয়ার এবং কানাডীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী অনিতা আনন্দ।
কানাডায় এখন প্রচন্ড ঠান্ডা আবহাওয়া চলছে। প্রতিকূল এই আবহাওয়া সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট চত্বরের মধ্যে ঢুকে পড়ায় সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অবশ্য সম্ভাব্য সহিংসতা মোকাবিলায় কানাডার পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
গত শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের কাছে জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছিলেন, ভ্যাকসিন ম্যান্ডেট বিরোধী এই বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। তিনি আরও বলেছিলেন, বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের সংখ্যা অল্প এবং তারা কানাডার নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব করেন না।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় কানাডায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৩ হাজার মানুষ এবং মারা গেছেন ১৩৪ জন।
করোনা মহামারির শুরু থেকে উত্তর আমেরিকার এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৩০ লাখ ২৭ হাজার ১৬৭ জন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৩৩ হাজার ৬৪৭ জন মারা গেছেন।