পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন দেখে ফেলায় অটোরিকশা চালককে হত্যার ঘটনায় বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) সাবেক এক সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) জেলা জজ টিএম মুসার বরিশাল জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৬ মাস কারাদণ্ড এবং হত্যায় সহযোগিতার দায়ে আরও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী লস্কর নুরুল হক। তিনি জানান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায় ঘোষণা শেষে আসামিকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো অপরাধ করে কেউ পার পেতে পারেন না।
মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন শামসুজ্জামান খান নয়ন। তিনি জানান, দণ্ডপ্রাপ্তদের পরিবারের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে। মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামি শোয়েবকে সাত দিনের মধ্যে আপিল করার জন্য আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালত থেকে জানা গেছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শোয়েব হাওলাদার সবুজ বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলার মাদারকাঠি গ্রামের আদম আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি বিজিবি সদস্য হিসেবে চুয়াডাঙ্গা সদর দফতরে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার পর সাময়িক বরখাস্ত হন। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি একই উপজেলার সলিয়াবাকপুর এলাকার সোবাহান সরদারের ছেলে আলী আজিম।
জানা গেছে, মাদারকাঠি গ্রামের জামাল খান অটোরিকশা চালক। ২০১৫ সালের ১৭ জুন সকালে তার লাশ ওই গ্রামের কাছে খালে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। এর আগে ১৫ জুন রাতে মোবাইলে জামালকে ডেকে নিয়ে যান বিজিবি সদস্য শোয়েব হাওলাদার সবুজ। সেখানে মারধর ও হত্যা করে লাশ খালে ভাসিয়ে দেন। এ ঘটনায় নিহত জামালের ভাই আবুল কালাম খান বাদী হয়ে বানারীপাড়া থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় শোয়েবের বাবা, মা, ভাইসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত শেষে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন চৌধুরী ২০১৬ সালের ১২ মার্চ শোয়েব হাওলাদার সবুজ, আলী আজিমসহ আট জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকায় শোয়েবের বাবা-মা ও ছোট ভাই সোহাগকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেন।
তদন্তে বেরিয়ে আসে, হত্যাকাণ্ডের ১৫ দিন আগে বিজিবি সদস্য শোয়েবকে তার পরকীয়া প্রেমিকা প্রতিবেশী এক গৃহবধূর সঙ্গে দৈহিক মিলনের সময় গভীর রাতে দেখে ফেলেন অটোরিকশা চালক জামাল খান। এ নিয়ে ওই সময়ে শোয়েব জামালের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাও করেন। কিন্তু শোয়েবের সঙ্গে প্রতিবেশী গৃহবধূর পরকীয়া প্রেমের কথা এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৫ জুন রাতে মোবাইলে কল করে জামালকে বাড়িতে ডেকে নেন শোয়েব। পরে সেখানে হত্যা করে খালে লাশ ফেলে দেন।
মামলার এজাহারে আরেক প্রতিবেশী দিঘিরপাড়ের বাসিন্দা রশিদের ছেলে মাহবুবের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়, মাহাবুব ওই রাতে আহম্মাদাবাদ থেকে মাহফিল শুনে বাড়ি ফেরার পথে শোয়েবের বাড়ি অতিক্রমকালে বাড়ির ভেতর থেকে গোঙানির শব্দ শুনতে পান। বিষয়টি জানতে শোয়েবের বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তার মা-বাবা ও ছোট ভাই জানায় বাড়িতে কিছু ঘটেনি।
তবে শোয়েবের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হলে বিজিবি সদর দফতর থেকে আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে শোয়েব হত্যার কথা স্বীকার করে জানায়, আলী আজিমসহ তিন/চার জন তাকে হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ মামলায় ২৯ জনের সাক্ষ্য প্রদান করে সত্যতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়। সাক্ষী প্রমাণে দোষী সাব্যস্ত হলে আদালত শোয়েবকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর এবং আলী আজিমকে যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ দেন। বাকি ছয় জনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের বেকসুর খালাস দেন