সিএনএম প্রতিনিধিঃ
বেসরকারি একটি ব্যাংকে ৫২৫ কোটি টাকার এলসি করেছিলেন তিনি। এক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন), ট্রেড লাইসেন্স, শিল্প-কারখানার কাগজপত্র ইত্যাদিও করিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার (৮ জুন) সকালে তাকে রাজধানীর বনশ্রীর নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
এলসির নথিপত্র অনুযায়ী তার নাম সুরুজ মিয়া। যদিও তার প্রকৃত নাম বিল্লাল হোসেন খান। শুধু তা-ই নয়; পরিচয়পত্র, টিআইএন, ট্রেড লাইসেন্সগুলোও ভুয়া, যা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তৈরি করেছেন। উপরন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে তিনি যে নম্বরটি উল্লেখ করেছেন, সেটি কোনো পুরুষেরই নয়, নারীর। আর এ সবের কল্যাণে পোলট্রি শিল্পের মেশিনারিজ আমদানির নামে মিথ্যা ঘোষণায় ৫৬টি মালবাহী কন্টেইনারে বিল্লাল আনেন মদ, সিগারেটের মতো বিদেশি কম দামের পণ্য। এভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন আন্তর্জাতিক অর্থ পাচারকারীচক্রের এ মূল হোতা।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বিল্লাল হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর ধাপে ধাপে উঠে এসেছে জাল-জালিয়াতি, ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কীভাবে অর্থপাচার হয়েছে- এ সবের চাঞ্চল্যকর তথ্য। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিল্লালকে। এর পর আদালত তোলা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুর রউফ বলেন, বিল্লাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি চক্র চীনের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে মিথ্যা ঘোষণায় দুটি চালানে নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি করে। একটি চালানে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় ‘হেভ্রা ব্রাঙ্কো’ নামের প্রতিষ্ঠানের নামে ৩১টি কন্টেইনারে ২৯১ কোটি টাকার পণ্য মিথ্যা ঘোষণা এবং নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা নন্দলালপুরে ‘চায়না বিডিএল’ নামের প্রতিষ্ঠানের নামে একইভাবে ২৫টি কন্টেইনারে ২৩৪ কোটি টাকার অল্পমূল্যের পণ্য আমদানি হয়। এ দুটি প্রতিষ্ঠান ও আমদানিতে ব্যবহৃত সব ধরনের কাগজপত্র জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়। আমরা এলসি থেকে শুরু করে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে প্রতারণার বিষয়টি তদন্ত করছি।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, হেনান আনহুই এগ্রো এলসি এবং এগ্রো বিডি অ্যান্ড জেপি নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে একইভাবে মদ ও সিগারেট আমদানির ঘটনায় ২০১৭ সালের ৫ ও ৬ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে ৭৮টি কন্টেইনার আটক করে সংস্থাটি। ওইসব কন্টেইনারে পোলট্রি ফিডের ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির মিথ্যা ঘোষণায় ৮৭৪ কোটি টাকা পাচারের ঘটনায় ঢাকার পল্টন থানায় অর্থপাচার আইনে ১৫টি মামলা দায়ের করা হয়। ওই চালান দুটির সূত্র ধরে সুরুজ মিয়া ওরফে বিল্লাল হোসেনের অর্থপাচারের ঘটনা উঠে আসে তদন্তকারীদের সামনে।
বিল্লাল হোসেনসহ ২০১৬-১৭ সালে মিথ্যা ঘোষণায় এমন ৩১টি এলসির মাধ্যমে ১৩৪টি কন্টেইনার আমদানি করা হয়, যার আড়ালে ১৫৩৯ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এসব ঘটনায় দায়ের হয়েছে মোট ৩০টি মামলা। মামলাগুলো তদন্তাধীন।
শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিল্লাল হোসেন দাবি করেছেন তিনি ঢাকায় বালু ও পাথরের ব্যবসা করতেন। তার কারখানা ও বসবাসের ঠিকানা খিলগাঁও দেখানো হলেও ওই নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্বিত্ব নেই। তার আসল বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। এমনকি এলসি করতে ব্যাংকের নমিনিও ভুয়া দিয়েছেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে পোলট্রি শিল্পের যন্ত্রপাতির নামে একে একে ৯০ কন্টেইনার ভর্তি করে এনেছেন মদ, সিগারেটসহ উচ্চ শুল্কের পণ্য। এসব পণ্যের আমদানিতে শুল্ক দেওয়ার কথা ৬০১ শতাংশ হারে। তবে তিনি পোলট্রি শিল্পের যন্ত্রপাতি হিসেবে শুল্ক দিয়েছেন মাত্র ১ শতাংশ। অন্যদিকে শিল্পের উচ্চমূল্যের মেশিনারিজ আমদানি করে বিশাল অঙ্কের অর্থ পাচার করেছেন।