সিএনএম প্রতিনিধিঃ
মাদারীপুর সদর উপজেলার গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে চিহ্নিত করে চক্রের সদস্যরা তাদের দালালি কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। এসব চক্রের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলো। দালালচক্র বিভিন্ন দেশে মোটা বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে দিনের পর দিন। অনেককে জীবন দিতে হচ্ছে অথৈ সমুদ্রে কিংবা মাফিয়াদের হাতে।
গত সোমবার (৩ মে) থেকে লিবিয়ায় মাফিয়াদের হাতে আটকা রয়েছে মাদারীপুরের ২৪ জন যুবক। মাফিয়ারা নির্যাতন করে সে সব ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা দাবী করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভিডিওতে যাকে দেখা যাচ্ছে তার নাম জনি মিয়া, তার সাথে রয়েছে হিফজু হাওলাদার এ ২জনের বাড়ি চাষার গ্রামে। এছাড়াও তাদের সাথে আরও রয়েছেন মোঃ আশাদুল খান, মোঃ জাহিদুল ইসলাম তাদের বাড়ি ধুরাইল ইউনিয়ন সরদার কান্দী গ্রামে। বাকি ১৯ জনের বাড়ি মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। মাফিয়ারা লোকজন তাদের পিটিয়ে তাদের পরিবারের কাছে বলতে বাধ্য করছে, টাকা না দিলে তাদের মেরে ফেলা হবে। এতে পরিবারের লোকাজন আতঁঙ্কে রয়েছে।
জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার চাষার গ্রামের বাসিন্দা জাহিদ খান ইউছুব এলাকার খুব পরিচিত দালাল। ৪ থেকে ৫ বছর যাবৎ তিনি মানব পাচারের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। তার মাধ্যমে ৩ শত যুবক লিবিয়ার পথে পাড়ি জমিয়েছেন। যার বেশির ভাগ সাগর পথ পাড়ি দিয়ে ইতালী পাড়ি দিয়েছে। এ সব লোকজন পাঠাতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করে। জাহিদ খানের কাজ হলো মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক তাদের সংগ্রহ করা।
প্রত্যেকের সাথে ৮ থেকে ৯ লক্ষ টাকা চুক্তি হয়। রুট হিসেবে তারা ব্যবহার করেছেন ঢাকা টু লিবিয়া তারপর সেখান থেকে গেম করে ইতালী।
জাহিদ খান এর মাধ্যমে মাদারীপুরের যে সকল লোকজন লিবিয়া গেছেন তাদের অনেকে এখনো যেতে পারেনি। তারা লিবিয়ার বিভিন্ন শহরে অবস্থান করছেন। সর্বশেষ তার মাধ্যমে যাওয়া ২৪ জন যুবক লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে আটকা রয়েছে। এলাকার প্রভাবশলী হওয়ায় তাকে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতে পারছে না।
মাফিয়ার কাছে আটক হিফজু হাওলাদারের বাবা হাবু হাওলাদার বলেন, আমি আমার ছেলেকে জাহিদ খান ইউছুব এর মাধ্যমে গত দুমাস আগে লিবিয়া পাঠাই। তার সাথে আমার ৮ লক্ষ টাকা চুক্তি হয়। ২ লক্ষ টাকা আমি ইতিমধ্যে তার কাছে দিয়েছি। বাকি টাকা লিবিয়া যাওয়ার পর দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ২দিন ধরে আমার ছেলে সহ মোট ২৪ জন লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে আটকা রয়েছে। আমি আমার ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় দেখতে চাই। এ ব্যাপারে জাহিদ খান আমাকে বলেছে, আমি আপনার ছেলেকে ছাড়িয়ে আনার ব্যাবস্থা করবো।
জানতে চাইলে জাহিদ খান ইউসুফ মুঠোফোনে বলেন, আমি কোন লোক পাঠাই নাই। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।
মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান মোঃ মজিবর রহমান মৃধা বলেন, আমি জাহিদকে চিনি। তবে সে মানবপাচারের সাথে জড়িত তা জানা ছিল না। আমার ইউনিয়ন এর কিছু লোকসহ মাদারীপুরের ২৪ জন লিবিয়ায় মাফিয়ার কাছে বন্দী রয়েছে এ বিষয়ে আমি অবগত না।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমরা এই সংবাদটি শুনেছি। আমি আমরা তদন্ত অফিসারকে চাষার গ্রামে পাঠিয়েছি। এবং অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’