মাহে রমজান অফুরন্ত ফজিলতের মাস। রমজান মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ তারাবি, তাহাজ্জুদ, সুন্নত ও নফল নামাজ আদায়ের গুরুত্ব অনেক বেশি।
রমজান মাসের প্রথম জুমাবারঃ
মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ইসলামের দৃষ্টিতে দিনটি অনেক বরকতময় ও তাৎপর্যপূর্ণ। আল্লাহ এ দিনকে অন্যান্য দিনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা এই দিনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝ।’ সূরা জুমুআ :০৯
হাদিসে জুমাবার তথা শুক্রবারকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য করে ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন, শুক্রবার এবং এই দিনের ইবাদত-বন্দেগি, জুমার নামাজ ইত্যাদির গুরুত্ব অনেক বেশি। তবে আজকের শুক্রবার রমজান মাসে হওয়ায় এর তাৎপর্য আরও বহুগুণ বেশি। জুমার দিন মসজিদে উত্তম পোশাক পরিধান করে যেতে বলা হয়েছে। সে সঙ্গে হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে পরে এসে মুসলি্লদের ঠেলে কাতারের সামনের দিকে যেতে। এমনকি, কাউকে তুলে দিয়ে সেখানে বসতেও নিষেধ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জুমার নামাজে তিন ধরনের লোক হাজির হয়। ক). এক ধরনের লোক আছে, যারা আল্লাহর মসজিদে প্রবেশের পর তামাশা করে, তারা বিনিময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তামাশা ছাড়া কিছুই পাবে না; খ). দ্বিতীয় আরেক ধরনের লোক আছে, যারা জুমায় হাজির হয় সেখানে কিছু দোয়া-মোনাজাত করে, ফলে আল্লাহ যাকে চান, তাকে কিছু দেন আর যাকে ইচ্ছা দেন না এবং গ). তৃতীয় প্রকার লোক হলো যারা জুমায় হাজির হয়, চুপচাপ থাকে, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনে, কারও ঘাড় ডিঙিয়ে সামনে এগোয় না, কাউকে কষ্ট দেয় না, তাদের দুই জুমার মধ্যবর্তী সাত দিনসহ আরও তিন দিন যোগ করে মোট ১০ দিনের গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেন।’ আবু দাউদ শরিফ
শুক্রবারে বিশেষ করণীয় হলো সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা। এই সূরা তিলাওয়াতের ফজিলত অনেক বেশি। হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যারা জুমার দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাদের জন্য একটা নূর সৃষ্টি করবেন, যা কিয়ামতের দিন তাদের জন্য আলোর কারণ হবে।’
শুক্রবারের ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন। সে সঙ্গে উল্লেখ করেছেন এ দিনের কিছু আমলের কথা, যে আমলের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হয়।
শুক্রবারে মসজিদে গিয়ে আমাদের কর্তব্য হলো, ইমামের কাছাকাছি বসার চেষ্টা করা, চুপচাপ খুতবা শোনা, সামর্থ্য অনুযায়ী দান-খয়রাত করা, রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা ও আল্লাহর কাছে প্রচুর পরিমাণে দোয়া করা।
হাদিসে বলা হয়েছে, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা চায়, তা-ই তাকে দেওয়া হয়। আর এ সময়টি হলো জুমার দিন আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। সহিহ বোখারি
জুমার নামাজে মুসলি্লরা যাবতীয় কাজকর্ম স্থগিত রেখে মসজিদ অভিমুখে গমন করেন এবং সবাই একত্রে জামাতে নামাজ আদায় করেন।
এভাবে মসজিদে নামাজ পড়তে এলে তাদের পরস্পরের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। গড়ে ওঠে সামাজিক ভ্রাতৃত্ব, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, পারস্পরিক হৃদ্যতা ও সম্প্রীতি। আর মানুষের প্রতি রোজার বিধান প্রদানের উদ্দেশ্যই হলো, মানুষের মধ্যে উলি্লখিত গুণগুলো সৃষ্টি করা।