সিএনএম প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার দেবিদ্বারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় পেটে গজ রেখে সেলাই করা হয়েছিল শারমিন আক্তারের (২৫) শরীরে।
মঙ্গলবার রাত দেড়টায় ঢাকা মেডিকেল সেন্টারের আইসিইউ ইউনিটে মারা যান তিনি। তার পাঁচ মাস বয়সী ছেলে ও তিন বছর বয়সী মেয়ে সন্তান রয়েছে।
সূত্র জানায়, ৫ নভেম্বর কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মোগসাইর গ্রামের মো. রাসেল মিয়ার স্ত্রী মোসা. শারমিন আক্তার পাশের দেবিদ্বার উপজেলা সদরের আল ইসলাম হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন। ওইদিনই ডাক্তার রোজিনা আক্তার ও ডা. শামীমা আক্তার লিন্টা তার সিজার করেন। এতে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। অপারেশেনের কিছুদিন পর থেকে তার পেটে ব্যথা ও ক্ষত থেকে পুঁজ বের হতে থাকে।
গত ৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় শারমিনকে কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডা.কর্নেল আবু দাউদ মো. শরীফুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক তার পেটে অপারেশন করে আস্ত গজ (ব্যান্ডেজ) বের করেন। ১০ এপ্রিল কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে রেফার করেন। শারমিনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওইখানে ভালো চিকিৎসার আশ্বাস না পাওয়ায় ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তরের পূর্বে বারবার সন্তানদের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এসময় মায়ের কাছে তার দুই সন্তানকে দেখভাল করার আকুতি জানান শারমিন।
শারমিনের বড় ভাই রহুল আমিন জানান, শারমিনের আগেও একটি তিন বছরের মেয়ে সন্তান রয়েছে। তার প্রথম সন্তানও সিজারে হয়েছে। দ্বিতীয় সন্তান প্রসবে সিজার করার পর থেকে তার পেটে অনেক ব্যথা ও পুঁজ পড়ছিল। ডাক্তার ও হাসপাতালের অবহেলায় আমার বোন মারা গেছে। বাদ জোহর শারমিনের জানাজা হবে। বিকেলে ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’
শারমিনের মৃত্যুর ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসানের নির্দেশে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে গঠন করা তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামরুন নাহার, দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মঞ্জুর রহমান ও উপজেলা প্রাইভেট হাসপাতাল মালিক সমিতির সভাপতি ময়নাল হোসেন।
আল ইসলাম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ মোহাম্মদ হোসেন এনাম বলেন, রোগীর পেটে গজ থেকে যাওয়ার বিষয়টি আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি। ঘটনাটি পাঁচ মাস আগের। এরপর রোগীর স্বজনরা আমাদের সাথে আর যোগাযোগ করেনি। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা অনুতপ্ত।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসেন জানান, এ ঘটনায় ডাক্তার ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।