আলমগীর (সেলিম)
একটা সময় ছিল আমাদের উপমহাদেশে জনপদ মানেই সেখানে একটি বটগাছ থাকবে। আধুনিককালে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হল, কনভেনশন হল ও কনফারেন্স সেন্টার সংস্কৃতি চালু হওয়ায় বটগাছের নিচে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জনসভা ও জনমিলন আজ ইতিহাস। আমাদের দেশের বেশিরভাগ গ্রাম্যবাজার ও মেলা বটগাছ তথা বটতলাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। আজও অনেক এলাকায় বটতলায় হাট—বাজার বসে, মেলা বসে, নাচ—গান হয়, লোকগানের আসর বসে, জনসভাও হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বী ও ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক সম্প্রদায়ের কাছে বটগাছকে পবিত্র গাছ বলে মনে করা হয়।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ও ইতিহাস—ঐতিহ্য তথা কালের সাক্ষী হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক এলাকায় বটগাছ কাটা নিষিদ্ধ। সীমাহীন উপকারিতা ও ধর্মীয় গুরুত্ব বিবেচনায় বটগাছ ভারতের জাতীয় বৃক্ষ। সনাতন ধর্মে বটগাছের পাতাকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রেস্টিং পেল্গস হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আমাদের উপমহাদেশেও অনেক পীর—ওলি, দরবেশ, সাধকগণ বটগাছের নিচে সাধনা করেছেন। অনেক পীর—দরবেশও বটগাছের নিচে আস্তানা গেড়েছেন। বাংলাদেশে অনেক ওলি—আউলিয়ার মাজার রয়েছে বটগাছের ছায়ায়।
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে বটগাছকে নিয়ে গড়ে উঠেছে নানা রূপকথা। বটগাছকে একটি আগ্রাসী গাছ হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে উপগাছা হিসেবে বটগাছ বেড়ে ওঠে। কিছুদিন পরেই তার আশ্রয়দাতা গাছকে গিলে ফেলে। বটগাছের নিচে অন্য কোনো গাছ কেন, ঘাসও জন্মাতে পারে না; অর্থাৎ বটবৃক্ষের ছায়াতলে আরেকটা বৃক্ষ বেড়ে উঠতে পারে না। এমনকি সে তার নিজ গোত্রীয় আরেকটি বটগাছকেও সে তার ছায়াতলে জন্মাতে দেয় না। আমাদের আগ্রাসনে দেশের কত শত সহস্র বটবৃক্ষ ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই। কিন্তু ওসমানি উদ্যোনে উক্ত বটবৃক্ষটি মানুষের চোখের নজর কেড়ে নিয়েছে। এ বটবৃক্ষটির দিকে যে কারো নজর পড়লেই একবার দেখার জন্য দাড়িয়ে সেল্ফিও তুলে অনেক আগন্তুক।