নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের দুই সপ্তাহ পর ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বরখাস্তকৃত মুখপাত্র নুপুর শর্মার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সমাজের শান্তি বিনষ্ট, অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং বিদ্বেষ ছড়ানোর দায়ে বিজেপির এই নেতা ছাড়াও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার দিল্লি পুলিশ এই মামলা দায়ের করেছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, বিজেপির সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্মা, একজন সাংবাদিক, সামাজিক যোগােযোগমাধ্যমের কয়েকজন ব্যবহারকারী এবং ধর্মীয় বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
বিজেপির বরখাস্তকৃত মুখপাত্র নুপুর শর্মা এবং দলটির দিল্লির গণমাধ্যম শাখার বহিষ্কার হওয়া প্রধান নবীন কুমার জিন্দালের নবীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের পর মুসলিম বিশ্বে— বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর প্রচণ্ড সমালোচনা ও কূটনৈতিক চাপের মুখে পুলিশ এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
আরও পড়ুন: মহানবীকে নিয়ে মন্তব্যকারী কে এই নুপুর শর্মা?
নুপুর শর্মা উত্তর প্রদেশের জ্ঞানবাপি মসজিদ ইস্যুতে গত মাসের শেষের দিকে টেলিভিশনের এক টকশোতে এবং জিন্দাল টুইটারে নবীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। তাদের এই মন্তব্যের পর দেশে-বিদেশে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়ে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতৃত্বাধীন নরেন্দ্র মোদির সরকার।
ভারতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং টেলিভিশনে প্রায়ই এমন বিতর্কিত মন্তব্য দেখা যায়। এর মাঝেই পুলিশ দেরীতে পদক্ষেপ নেওয়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। আর এই পদক্ষেপ এমন এক সময় নেওয়া হলো যখন সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ইরানসহ প্রায় ১৬টি দেশ বিজেপির দুই নেতার মন্তব্যের জেরে ভারতের তীব্র সমালোচনা এবং নিন্দা জানিয়েছে। কূটনৈতিক চাপের মুখেই কী ভারত দুই সপ্তাহ পর বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করল, সেই প্রশ্নও করছেন অনেকে।
এনডিটিভি বলছে, দিল্লি পুলিশের বিশেষ সাইবার ইউনিট কারও অভিযোগের ভিত্তিতে নাকি স্বত:প্রণোদিত হয়ে এই মামলা দায়ের করেছে সেটি এখনও পরিষ্কার নয়। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক বার্তা এবং সহিংসতার উসকানির বিষয়ে নিয়মিত নজরদারি করা হচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: মহানবীকে নিয়ে মন্তব্য: কুয়েতে তাক থেকে সরিয়ে ফেলা হল ভারতীয় পণ্য
মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ ভারতে ক্রমবর্ধমান চরমপন্থা ও ধর্মীয় বিদ্বেষের নিন্দা জানাতে গত কয়েক দিন ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের তলব করে। এর মধ্যে কয়েকটি দেশ নবীকে নিয়ে বিজেপি নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্যের দায়ে ভারতকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ারও দাবি জানিয়েছে।
পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় আসামি হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারা হলেন— বিজেপির দিল্লির গণমাধ্যম শাখার বহিষ্কার হওয়া প্রধান নবীন কুমার জিন্দাল, পিস পার্টির প্রধান মুখপাত্র শাদব চৌহান, সাংবাদিক সাবা নাকভি, হিন্দু মহাসভার পদধারী নেতা শাকুন পাণ্ডে, রাজস্থানের মাওলানা মুফতি নাদিম, আব্দুর রেহমান, অনীল কুমার মীনা এবং গুলজার আনসারি।
হিন্দু মহাসভার নেতা শাকুন পাণ্ডে, যিনি সামাজিক মাধ্যমে অন্নপূর্না মা উপনাম ব্যবহার করেন; তিনি সম্প্রতি ভারতে শুক্রবারের পবিত্র জুমার নামাজে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি দেশটিতে সাধারণ জনগণকে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে সংখ্যালঘুদের গণহত্যার ডাক দিয়েছিলেন। বিতর্কিত এসব আহ্বানের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উসকে দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
আরও পড়ুন: মহানবীকে নিয়ে মন্তব্য: মুসলিম বিশ্বে অগ্নিপরীক্ষায় ভারত
এছাড়াও অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) প্রধান ও এমপি আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এবং ঘৃণা ছড়ানোর জন্য পরিচিত ইয়াতি নরসিংহ আনন্দের নামও রয়েছে মামলার অভিযোগে।
পুলিশ বলেছে, বিজেপির বরখাস্তকৃত মুখপাত্র নুপুর শর্মা এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় আরেকটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশের উপকমিশনার কেপিএস মালহোত্রা বলেছেন, ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই এফআইআর দায়ের হয়েছে।
অশান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অনলাইনে মিথ্যা এবং ভুল তথ্য প্রচারের দায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করবে দিল্লি পুলিশের সাইবার ইউনিট। যাতে সমাজে কোনও ধরনের অশান্তির পায়তারা করা সম্ভব না হয়, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মালহোত্রা।