পাকিস্তানে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের জন্য চীন সরাসরি দায়ী বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের সিংহভাগ সুবিধা পাচ্ছে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এতে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ। সংবাদমাধ্যম ইসলাম খবরের প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের ঋণফাঁদে ডুবে যাচ্ছে পাকিস্তান। ৯ মে ২৪টিরও বেশি চীনা প্রতিষ্ঠান পাকিস্তানে কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিয়েছে। এই সময়েরমধ্যে তাদের ১৫৯ কোটি মার্কিন ডলার বকেয় পরিশোধ করতে হবে।
চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) এর আওতায় পাকিস্তানে ৩০টিরও বেশি চীনা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। বিদ্যুৎ,যোগাযোগ, রেলওয়ে, মহাসড়ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে তারা। তবে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিযোগ, তাদের কর্মকর্তাদের ভিসা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। গুণতে হচ্ছে মোটা অংকের কর। প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্তত ২৫ জন প্রতিনিধি বকেয়া নিয়ে অভিযোগ করেছে। তারা জানিয়েছে, টাকা পরিশোধনা করছে কার্যক্রম বন্ধ রাখবে তারা।
চলতি বছর মার্চে চীন সিপিইসির বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প স্থগিত রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তাদের দাবি, স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের বকেয়া বিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ইসলাম খবরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা বিনিয়োগকারীদের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে তহবিলের নতুন উৎসব খুঁজছে বেইজিং। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার বকেয়া অর্থ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন। ২০২২ সালে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বেইজিং সফরেও বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল।
পাকিস্তানে ভূ-রাজনৈতিক সংকটও বৃদ্ধি পেয়েছে। বেলুচিস্তানে বিদ্রোহ বৃদ্ধি পাওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে দেশটির শান্তি ও স্থিতিশীলতা। বেলুচ বিদ্রোহীরা নিয়মিতই সিপিইসি অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে, কারণ চীনকে তারা এমন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মনে করে যারা বেলুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করতে পারে।
পাকিস্তানে তাই কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে চীন। করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার পর চীনা কর্মকর্তারা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।
২০১৫ সালে শুরু হয় সিপিইসি প্রকল্প। সে বছর ইসলামাবাদে ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনের ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড উদ্যোগের আওতায় সিইপিইসি প্রকল্পটি পাকিস্তান, চীন ও ইউরেশিয়াকে যুক্ত করবে।
সে সময় ওয়ান প্লাস ফোর সহযোগিতা মডেলে সম্মত হয় দুই পক্ষ। মূলত বিদ্যুৎ ও পরিবহন অবকাঠামোর ওপর জোর দেওয়া হয় এতে। চীনা কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটির মাধ্যমে এই অঞ্চলে পশ্চিমা প্রভাব কমাতে চায় এবং বেল্ট রোড প্রকল্প ত্বরান্বিত করতে চায়।
অন্যদিকে পাকিস্তান চায়, ভৌগলিকভাবে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে। সিপিইসি কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত তিনটি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৪০ লাখ ডলারের গাদার স্মার্ট বন্দর নগরীর কাজও। অন্যান্য প্রকল্প ধীরগতিতে এগোচ্ছে। ২০১৫ সালে শি জিনপিং ও তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন তা সময়মতো শেষ করা সম্ভব হবে কি না তা বলা মুশকিল
ইসলাম খবরের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিপিইসির মাধ্যমে পাকিস্তানের অনেক আশা ছিল। তবে তাদের আরও সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল। চীনকে একক কর্তৃত্ব না দিয়ে পাকিস্তানের উচিত ছিল সহাবস্থান নিশ্চিত করা। ২০১৮ সালের জানুয়ারি পাকিস্তানি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানি কোনও প্রতিষ্ঠান সিপিইসির আওতায় বিদ্যুৎ ও অন্যান্য প্রকল্পের কন্ট্রাক্ট পায়নি।