পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান দেশে গৃহযুদ্ধ চান বলে অভিযোগ করেছেন দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। একইসঙ্গে এই ‘জঘন্য পরিকল্পনার’ জন্য জাতি তার (ইমরানের) কলার ধরে রাখবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া ও জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে ইমরান খান লংমার্চ করার ঘোষণা দেওয়ার পর রোববার (২২ মে) এই মন্তব্য করেন শেহবাজ শরীফ। সোমবার (২৩ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
গত মাসে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ইমরান খান। মূলত নিজ দলের প্রায় দুই ডজন সংসদ সদস্যের দলত্যাগের পর ইমরান সরকারের পতন ত্বরান্বিত হয়।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানজুড়ে বড় বড় শহরগুলোতে একের পর এক সমাবেশ করেছেন সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার। এসব সমাবেশে পিটিআই নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের উপস্থিততি ও অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।
ধারাবাহিক এসব সমাবেশে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া ও জাতীয় নির্বাচনের দাবি তোলার পাশাপাশি তার ডাক এলে রাজধানী ইসলামাবাদে সবাইকে হাজির হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইমরান। বলা হয়েছিল মে মাসের শেষ সপ্তাহে এই লংমার্চের ডাক দেওয়া হবে। অবশেষে রোববার সেই দিনক্ষণ ঘোষণা করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
আগামী ২৫ মে রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চের ঘোষণা দিয়ে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ইমরান খান বলেন, ‘আমি ২৫ তারিখে ইসলামাবাদের শ্রীনগর মহাসড়কে আপনাদের সঙ্গে দেখা করব। সবাই এমনভাবে বের হবেন যাতে আপনারা সেখানে বিকেল ৩টায় পৌঁছান।’
লংমার্চে সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত যা কিছুই ঘটুক না কেন আমরা ইসলামাবাদে অবস্থান করবো।
মূলত ইমরানের এই ঘোষণার পরই পাকিস্তানের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। পিটিআইয়ের এই লংমার্চের পরিকল্পনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ রোববার বলেন, ‘ইমরান (খান) নিয়াজী দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু করতে চান। কিন্তু তিনি ভুল করছেন। এই ভুলের জন্য জাতি কখনোই তাকে ক্ষমা করবে না এবং তাকে কলার ধরে (আটকে) রাখবে।’
পাকিস্তান কিডনি ও লিভার ইনস্টিটিউটে পরিদর্শনের সময় শেহবাজ এই মন্তব্য করেন। এক মাসের মধ্যে সেখানে শেহবাজ শরীফে এটি তৃতীয় সফর। ইমরান খানের লংমার্চ ঠেকাতে সরকার সেনাবাহিনী মোয়েন করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে স্পষ্টতই বিরক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অন্যদিকে রোববার একই বিষয়ে কথা বলেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ। পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে তিনি বলেন, ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের লংমার্চকে ইসলামাবাদে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে কি না তা সরকার ও তার সহযোগীরা সিদ্ধান্ত নেবে।
এসময় গণমাধ্যমকে তিনি আরও বলেন, ‘যদি জোট ব্যবস্থা নিতে যায়, আমরা বিক্ষোভকারীদের এমনকি তাদের ঘর থেকে বের হতে দেবো না।’
অবশ্য ইসলামাবাদ অভিমুখে এই লংমার্চ শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হবে বলেই জানিয়েছেন ইমরানের পিটিআইয়ের নেতারা।