ক্যাসিনো কাণ্ডে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট মুক্তি পাওয়ার সংবাদে জেগে উঠেছে তার অনুসারীরা।
বুধবার (১১ মে) বিকালে সম্রাট মুক্তি পাওয়ার ঘোষণার পরপরই বিএসএমএমইউ এলাকায় জড়ো হতে থাকে তার সমর্থক, ভক্ত ও মহানগর যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জামিনে মুক্তির পাওয়ার পর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গিয়ে সম্রাটকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানায় তার অনুসারীদের অনেকে।
যুবলীগ সূত্র জানায়, বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ জামিন ও মুক্তির কাগজপত্র স্বাক্ষর করার পর নেতাকর্মীরা হাসপাতালের ভেতর ও বাইরে জমায়েত হতে থাকে। এ সময় নেতাকর্মীদের ভিড় না জমাতে অনুরোধ জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে মুক্তি পেলেও সম্রাটের বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তিন শর্তে তিনি আদালত থেকে জামিন নিয়ে মুক্তি পেয়েছেন। এদিকে চার মামলার আসামি সম্রাটের মুক্তির পর সরব হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। বুধবার দুপুর থেকে বিভিন্ন পোস্টে ‘সম্রাটের মুক্তি’ লেখা বিভিন্ন পোস্ট দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান বুধবার মোবাইল ফোনে বলেন, সম্রাট মুক্তি পাওয়ার পর হাসপাতাল ছেড়েছেন কারারক্ষীরা। সম্রাট এখনও হাসপাতালে সিসিইউতে ভর্তি রয়েছে। তার মুক্তিতে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয় নিয়ে পরে কথা হবে।
রাজধানীর মতিঝিল এলাকার কয়েকজন যুবলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দীর্ঘ ৩১ মাস পর সম্রাটের মুক্তির খবরে জেগে উঠেছে নেতাকর্মীরা। দুপুর থেকে মতিঝিল, শাহজাহানপুর, বাড্ডা এলাকায় সম্রাটের অনুসারীদের চায়ের দোকান, পাড়া-মহল্লায় দেখা গেছে। সম্রাটকে নিয়ে আলোচনা চলছে সবখানে। অনেকে বলেছে, আবার সরব হয়ে উঠবে মতিঝিল, শাহজাহানপুরসহ ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণসহ রাজধানী।
ওই যুবলীগ নেতারা আরও বলেন, শুধু ঢাকা দক্ষিণেই নয়, রাজধানীজুড়ে রয়েছে সম্রাটের ভক্ত-অনুসারী। তিনি কারাগারে এবং হাসপাতালে থাকাকালে প্রকাশ্যে এবং গোপনে যোগাযোগ করেছেন অনুসারীরা। সম্রাট আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। দীর্ঘ ৩১ মাস ‘সম্রাটের সাম্রাজ্য’বিহীন থাকা মেনে নিতে পারেনি তার অনুসারীরা। আজ (গতকাল) মুক্তির পর আবার জেগে উঠেছে তার অনুসারীরা।
এর আগে তিন মামলায় জামিন পেলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা সম্রাটের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় দুবার তার জামিন নাকচ করে দেন আদালত। অবশেষে বুধবার এই মামলায় জামিন দেন আদালত। সম্রাট অসুস্থ থাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিইউতে বন্দি অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কারামুক্তির পরও চিকিৎসার্থে তিনি এখানে থাকবেন বলে জানা গেছে।
সম্রাটের আইনজীবী এহেসানুল হক সমাজী মোবাইল ফোনে বিদেশ থেকে এই প্রতিবেদককে বুধবার জানান, সম্রাটের বিরুদ্ধে চারটি মামলার মধ্যে চারটিই জামিন মঞ্জুর করেছেন বিজ্ঞ আদালত। সর্বশেষ দুদকের করা মামলায় জামিন পাওয়ার পর তাকে কারামুক্ত করে হাসপাতাল থেকে কারারক্ষীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছেন তিনি।
সমাজী বলেন, এ মুহূর্তে তিনি বিদেশে তার মেয়ের কাছে রয়েছেন। তিনি বলেন, বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জেনেছি, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে চারটি মামলার মধ্যে অবশিষ্ট মামলায়ও জামিন দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে চারটি মামলায় সম্পৃক্ত করা হয় সম্রাটকে। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা সম্রাট অসুস্থ ছিলেন। তার অসুস্থ বিবেচনা আমলে নিয়ে বিজ্ঞ আদালত একে একে চারটি মামলাতেই জামিন দিয়েছেন। এখন আমরা মামলা থেকে খালাস পেতে আইনগতভাবে লড়ব।
সম্রাট বিদেশ যেতে পারবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবীণ এই আইনজীবী আরও জানান, তিন শর্তে বিজ্ঞ আদালত সম্রাটকে জামিন দিয়েছেন। তার মধ্যে একটি হলো মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। দ্বিতীয়ত, পাসপোর্ট আদালতে জমা থাকবে। তৃতীয় শর্ত, সম্রাট যেহেতু অসুস্থ তার শারীরিক অবস্থা আদালতকে ধারাবাহিকভাবে জানাতে হবে। এহেসানুল হক সমাজী আরও বলেন, আমি বিদেশে থাকায় জামিনের ডকেট এখনও হাতে পাইনি।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সম্রাটকে কুমিল্লা থেকে আটক করে র্যাব। এ সময় তার সহযোগী তৎকালীন যুবলীগ নেতা এনামুল হক আরমানকেও আটক করা হয়। এরপর ১২ নভেম্বর ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঢাকার সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।