সিএনএম২৪ডটকমঃ
উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ার একটি স্কুল থেকে তিন শতাধিক স্কুল ছাত্রীকে অপহরণ করেছে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীরা।
পুলিশের ধারণা, শুক্রবার সকালে জামফারা রাজ্যের জাঙ্গেবে শহরের ওই বোর্ডিং স্কুল থেকে মেয়েদের অপহরণ করার পরে বন্দুকধারীরা তাদের একটি বনে নিয়ে গিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এটি কোন স্কুল থেকে গণ অপহরণের সবচেয়ে বড় ঘটনা।
সশস্ত্র দলগুলো প্রায়ই মুক্তিপণের জন্য স্কুলছাত্রীদের আটক করে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদু বুহারি এই অপহরণের ঘটনাকে “অমানবিক এবং সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য” বলে নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “ডাকাতরা বিপুল পরিমাণ মুক্তিপণের আশায় নিরীহ স্কুল শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে চাইছে। তাদের বলতে চাই এই প্রশাসনকে ব্ল্যাকমেইল করে দমিয়ে রাখা যাবে না।”
আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য জিম্মিদের জীবিত অবস্থায়, কোন ক্ষতি হতে না দিয়ে, নিরাপদে উদ্ধার করা।
মি. বুহারি বলেন, কর্তৃপক্ষ ওই দস্যুদের বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনী মোতায়েন করতে পারলেও আশঙ্কা আছে যে তারা স্কুল ছাত্রীদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে পারে।
এর আগে গত সপ্তাহে প্রতিবেশী নাইজার রাজ্যের কাগারা থেকে ২৭ শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৪২ জন অপহৃত হন। যাদের আজ পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি।
২০১৪ সালে ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারাম উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর চিবক থেকে ২৭৬ জন স্কুল ছাত্রীকে অপহরণ করে। যে ঘটনা সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল।
তবে সবশেষ এই অপহরণের ঘটনাটি কোন সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের কাজ বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে। একদল বন্দুকধারী পিক-আপ ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে জাঙ্গেবে শহরের সরকারী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে, ছাত্রীদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। স্কুলটির একজন শিক্ষক সংবাদমাধ্যম ‘পাঞ্চ’কে এ তথ্য জানান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দুকধারীদের মধ্যে কয়েকজন সরকারী সুরক্ষা বাহিনীর পোশাক পরে ছিল এবং তারা স্কুল ছাত্রীদের জোর করে গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে যায়।
তবে অন্য প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে জানিয়েছেন যে সশস্ত্র বাহিনী কোন গাড়ি করে নয়, বরং পায়ে হেঁটে স্কুল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে।
প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসি হাউসাকে জানিয়েছেন যে শতাধিক বন্দুকধারী এই স্কুলে প্রবেশ করেছিল।
“তারা স্কুলের গেটটি ভেঙে নিরাপত্তাকর্মীর ওপর গুলি চালায়। তারপরে তারা হোস্টেলে প্রবেশ করে এবং নামাজের সময় হয়েছে বলে মেয়েদের জাগিয়ে তোলে। সব মেয়েদের জড়ো করার পরে অস্ত্রধারীরা তাদেরকে নিয়ে জঙ্গলের দিকে চলে যায়। এ সময় মেয়েগুলো ভীষণ কাঁদছিল। জঙ্গলের দিকে যাওয়ার সময় ফাঁকা গুলি ছুড়ছিল অস্ত্রধারীরা,” জানান ওই প্রত্যক্ষদর্শী।
পরে অপহৃত ছাত্রীদের বাবা-মা পাগলপ্রায় হয়ে স্কুলের বাইরে জড়ো হন এবং কেউ কেউ তাদের মেয়েদের খোঁজ করতে ঝোপের ভেতরে ঢুকে পড়েন, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
বিবিসিকে স্কুলটির এক শিক্ষক জানান যে এই সময়ে বিদ্যালয়ের ৪২১ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। তারমধ্যে কেবল ৫৫ জনের খোঁজ মিলেছে।
পুলিশ বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, ওই মেয়েদের খুঁজে বের করতে পুলিশের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর একটি দল জাঙ্গেবেতে মোতায়েন করা হয়েছে।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলেছে যে, নাইজেরিয়ায় আবারও ছাত্রীদের গণ অপহরণের ঘটনায় তারা একইসাথে ক্ষুব্ধ ও শোকগ্রস্ত। এই ঘটনাকে তারা ” পাশবিক ” এবং ” শিশু অধিকার লঙ্ঘন ‘বলে আখ্যা দিয়েছে।’
হামলার পিছনে কারা জড়িত ছিল?
কোন দল বা গোষ্ঠী এখন পর্যন্ত এই অপহরণের দায় স্বীকার করেনি।
জামফারায় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করে থাকে।
তবে বন্দুকধারীরা যখন গত বছরের ডিসেম্বরে প্রতিবেশী ক্যাটসিনা রাজ্যের কানকারা থেকে ৩০০ জনেরও বেশি ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়, কিছু রিপোর্ট দাবি করেছিল এর পেছনে বোকো হারাম দায়ী।
যদিও বোকো হারাম উত্তর-পূর্বের কয়েকশ মাইল দূরের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী।
আসলে ওই ঘটনায় কারা জড়িত ছিল সেটা নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। পরে ওই ছেলেদের আলোচনার ভিত্তিতে ছেড়ে দেয়া হয়।
কেন স্কুলছাত্রীদের অপহরণ করা হচ্ছে?
উত্তর নাইজেরিয়ায় যখনই শিশুদের তাদের স্কুল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তখনই চিবকে মেয়েদের অপহরণের ঘটনাটি নতুন করে সামনে আসে।
ওই আলোচিত ঘটনার পরেও একই ধরণের অপহরণের ঘটনা, বারবার ঘটেছে। সেগুলো খুব একটা প্রচার পায়নি।
চিবকের ওই ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী হ্যাশট্যাগ # ব্রিং ব্যাক আওয়ার গার্লস অর্থাৎ আমাদের মেয়েদের ফিরিয়ে দাও প্রচারণাটি সারা বিশ্বের মনোযোগ কেড়েছিল।
তবে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো বুঝতে পারে যে শিশুদের গণ অপহরণ করলে কর্তৃপক্ষের ওপর মুক্তিপণ দেয়ার ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করা যায়। তাই একে অর্থ অর্জনের নিশ্চিত উপায় বলে তারা ধরে নেয়।
যদিও কর্তৃপক্ষ সব সময় অর্থ দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে।
এসব ঘটনা বন্ধ করতে সরকারের কোনও কৌশল আছে বলেও মনে হয় না।
তবে দুই সপ্তাহ আগে জামফারা রাজ্যের আইনপ্রণেতারা পরামর্শ দিয়েছেন যে, যেসব অপহরণকারী অনুতপ্ত তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা করে, তাদের আর্থিক উপার্জনের জন্য টেকসই সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।
এটি একটি বিতর্কিত কৌশল কিন্তু নাইজার ডেল্টা এর কিছু ইতিবাচক ফল পেয়েছে। ২০০৯ সালে সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচির পরে সেখানে অপরাধ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
তবে সরকার বলেছে যে তারা অপরাধীদের সাথে কোন আলোচনায় বসবে না।
এরিমধ্যে, উত্তর নাইজেরিয়ার গ্রামীণ স্কুলগুলো আগের চাইতে বেশ ঝুঁকিতে আছে।
স্কুলগুলো সুরক্ষিত করার জন্য কী করা হয়েছে?
চিবকে মেয়েদের অপহরণের ঘটনার পর “নিরাপদ স্কুল উদ্যোগ” কর্মসূচি চালু করা হয়।
এর আওতায় নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের স্কুলগুলোর আশেপাশে বেড়া তৈরি করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
তিন বছরের এই প্রকল্পের জন্য অন্তত দুই কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। যাতে সহায়তা দিয়েছেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের বৈশ্বিক শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত গর্ডন ব্রাউন।
এই স্কিমের অংশ হিসাবে অনেকগুলো কন্টেইনারে স্কুল তৈরি করে অস্থায়ীভাবে শেখার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।
তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কোনও বেড়া দেয়া হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
যদিও সম্প্রতি অপহরণের বেশ কয়েকটি ঘটনা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ঘটেছে, যা নিরাপদ স্কুল উদ্যোগের আওতায় আসেনি।
যদিও ২০১৮ সালে উত্তর-পূর্ব ইয়োবি রাজ্যের দাপচি শহরের সরকারী বিজ্ঞান স্কুল থেকে ১১০জন ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়।
যা এই উদ্যোগের সাফল্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।