ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে চীন যদি রাশিয়াকে অর্থ কিংবা সমরাস্ত্র সহায়তা দেয়, সেক্ষেত্রে চীনকে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বৈরী পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে হবে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
শুক্রবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ভিডিও কল করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। প্রায় দু’ঘণ্টা কথা হয় দুই দেশের রাষ্ট্রপতির মধ্যে। এ সময়েই এই হুঁশিয়ারি দেন বাইডেন।
জবাবে জিনপিং বলেন, ‘ইউক্রেন সংকট হলো এমন একটি ঘটনা যা আমরা দেখতে চাই না।’ পাশাপাশি চীনের রাষ্ট্রপতি যোগ করেন— যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই এই ফোন কলে উপস্থিত হয়েছেন তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেনের সংকট সমাধানে রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর বৈঠক করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন জিনপিং।
যুক্তরাষ্ট্রের শঙ্কা, চলমান রুশ সামরিক অভিযানে রাশিয়াকে অর্থ ও সমরাস্ত্র সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে চীন। এই শঙ্কা সূত্রপাত ব্রিটেনের দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ও মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে।
গত ১৩ মার্চ এই দু’টি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মস্কো চাইছে ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানে চীন যেন রাশিয়াকে সমরাস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে।
পত্রিকা দু’টির প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত ১৪ মার্চ বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান চীনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বেইজিং মস্কোকে অর্থনৈতিক বা অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছে কি না সেটি ওয়াশিংটন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং তেমন কিছু ঘটলে (চীনের বিরুদ্ধে) পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তবে সুলিভানের এই অভিযোগের জবাবে ওই দিনই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিয়্যু পেংগ্যিউ বলেছিলেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো আহ্বান কিংবা অনুরোধ এখন পর্যন্ত আসেনি এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে কেন্দ্র করে ২০০৮ সাল থেকে দ্বন্দ্ব চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। ওই বছরই ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিল ইউক্রেন। সম্প্রতি ন্যাটো দেশটিকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী সদস্যপদ’ হিসেবে মনোনীত করার পর আরও বাড়ে এই দ্বন্দ্ব।
ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনকে চাপে রাখতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো।
কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে— যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।
অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া; এবং তার দু’ দিন পর, ২৪ তারিখ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
শনিবার ২৪তম দিনে পৌঁছেছে এই সামরিক অভিযান।