টানা ষষ্ঠ দিনের মতো ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। একসঙ্গে তিনদিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় কয়েকদিনেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনের বহু এলাকা। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে যেকোনো ধরনের যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে যুক্তরাজ্য। মঙ্গলবার (১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই প্রথম ইউরোপের প্রথম দেশ হিসাবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় হামলা শুরু করেছে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টির মতো পড়েছে।
ইউএনএইচসিআর বলছে, ইউক্রেনের ৫ লাখ ২০ হাজারের বেশি বাসিন্দা ইতোমধ্যে তাদের ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে ৫০ লাখ পর্যন্ত মানুষ ইউক্রেনে ঘরছাড়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা সংস্থাটির।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের উপপ্রধানমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেছেন, ইউক্রেনে আরও ভারী কৌশল ব্যবহার করবে রাশিয়া এবং সেখানে সংঘটিত যেকোনো যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে সব পদক্ষেপ নিচ্ছি তার ভেতরে আমরা যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ সংরক্ষণ করার প্রচেষ্টাকেও সমর্থন করছি।’
রাশিয়ার ব্যাপক হামলার মুখে অবিলম্বে ‘নো ফ্লাই জোন’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো সেটি প্রত্যাখ্যান করে।
বিবিসি ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে ডমিনিক রাব এ বিষয়ে বলেন, ইউক্রেনের ওপর নো-ফ্লাই জোন আরোপ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইচ্ছুক নয়, কারণ এতে করে রুশ বিমানগুলোকে গুলি করে ভূপাতিত করার প্রবণতা বাড়বে, যা ‘স্পষ্টভাবে উত্তেজনা বাড়াবে’।
তিনি আরও বলেন, এর পরিবর্তে ইউক্রেন সংকট নিরসনে যুক্তরাজ্য তার সকল প্রচেষ্টাকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই এনেছে। যা মূলত পুতিনের যুদ্ধের অর্থায়নকে সীমিত করবে।
এদিকে দক্ষিণ ইউক্রেনের শহর খেরসন শহরের কেন্দ্রস্থল ঘিরে ফেলেছে রাশিয়ার সৈন্যরা। সে অঞ্চল থেকে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে, রাশিয়ার সৈন্যরা শহরটিতে স্থল হামলা শুরু করেছে। এ শহরটি রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়ার কাছাকাছি।
ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে খেরসন শহরের মেয়র ইগর কয়খায়েভ জানিয়েছেন, ‘খেরসন শহরের প্রবেশমুখে রাশিয়ার সৈন্যরা চেকপোস্ট বসিয়েছে। খেরসন ইউক্রেনের ছিল এবং থাকবে।’
এছাড়া ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইউক্রেন টোয়েন্টিফোরকে খেরসন-ভিত্তিক সাংবাদিক এলিনা পানিনা জানিয়েছেন, রাশিয়ার সৈন্যরা শহরটি ঘিরে ফেলেছে। সবদিকে রাশিয়ার সৈন্য এবং সামরিক সরঞ্জাম দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয় সাংবাদিক জানিয়েছেন, শহরে এখনও বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ রয়েছে। তবে তিন লাখ অধিবাসীর জন্য শহরের ভেতরে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে আসা বেশ কঠিন হয়ে গেছে। কারণ, শহরের বাইরে বিভিন্ন গুদামে খাদ্য মজুদ করা রয়েছে।