ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন চলছেই। একের পর এক শহর রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু হয়। মাত্র চারদিনে রাশিয়ার হামলায় নিহত হয়েছে ইউক্রেনের ১৪ শিশুসহ ৩৫২ জন বেসামরিক মানুষ। আহত হয়েছেন এক হাজার ৬৮৪ জন, যাদের মধ্যে ১১৬ জন শিশু। এমনটি দাবি করা ইউক্রেন অস্ত্র তুলে দিচ্ছে বেসামরিক নাগরিকদের হাতে। সৈন্যদের পাশাপাশি তারা রাশিয়ান সেনাদের প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। এদিকে, রাশিয়ার হামলার জবাবে দেশটির ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা জারি করছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো।
এই যখন পরিস্থিতি তখন বৈঠকে বসছে আজ (সোমবার) রাশিয়া ও ইউক্রেন। ইউক্রেন-বেলারুশ সীমান্তে প্রিপিয়াত নদীর কাছের এই বৈঠক রক্তস্রোত থামাতে কোনো ভূমিকা কি রাখবে?
বৈঠকে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিয়েছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। প্রশ্ন হচ্ছে এই আশ্বাসে কতটা আস্থা রাখতে পারে ইউক্রেন?
এ বিষয়ে ধারণা করার আগে মনে রাখতে হবে, এটি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিওর মধ্যে কোনো শীর্ষ সম্মেলন নয়। বরং এটি দুই পক্ষের প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক।
এই বৈঠককালে ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের নিরাপত্তার বিষয়ে দায় নিয়েছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) তিনি জেলেনস্কিকে ফোন করেন। তিনি আশ্বাস দেন, ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের ভ্রমণ এবং বৈঠকের পুরো সময় বেলারুশে অবস্থানরত সব বিমান, হেলিকপ্টার এবং ক্ষেপণাস্ত্র মাটিতে থাকবে। এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিচ্ছেন তিনি।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বেলারুশের প্রেসিডেন্টের এই আশ্বাসে কতটা আস্থা রাখতে পারে ইউক্রেন? এই প্রশ্নের উত্তরের আগে বলা দরকার কে এই আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো? বেলারুশের এই প্রেসিডেন্টের অথরিটিই গত বছর নিরাপত্তা সতর্কতার অজুহাতে বেলারুশের আকাশসীমার উপর দিয়ে যাওয়া রায়ানএয়ারের একটি ফ্লাইট নামাতে বাধ্য করেছিল। সে সময় তারা বেলারুশের এক যুবককে আটক করে। এ ঘটনায় তখন আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঢেউ বয়ে গিয়েছিল।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট বাশারের প্রতিনিধিরা এরকমই বৈঠক করেছিল বিরোধীদের সঙ্গে। মধ্যস্থতা করেছিল রাশিয়া। কৌতুকের বিষয় হলো, রাশিয়ান যুদ্ধবিমান কিন্তু আসাদের শত্রুদের ওপর আক্রমণও চালিয়ে যাচ্ছিল।
এর আগে ক্রেমলিন অভিযোগ করেছিল, ইউক্রেন বেলারুশে রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বৈঠকটি ওয়ারশে করার প্রস্তাব দেয় ইউক্রেন। কিন্তু এরপরই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে। জেলেনস্কির পক্ষ থেকে ক্রেমলিনের এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। আজকের (সোমবার) বৈঠকটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ক্রেমলিনের অভিযোগ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
যুদ্ধে গোলাবারুদ সমান তালে চালাতে চালাতেই আজ ইউক্রেনের সঙ্গে বৈঠকে বসছে রাশিয়া। ২০১৭ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রতিনিধিরা এরকমই বৈঠক করেছিল বিরোধীদের সঙ্গে। কাজাখস্তানের রাজধানীতে ওই আলোচনা বৈঠকে মধ্যস্থতা করেছিল রাশিয়া। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বিরোধী পক্ষকে সমর্থন দেওয়া ইরান এবং তুরস্কও মধ্যস্থতায় সাহায্য করেছিল। কৌতুকের বিষয় হলো, সে সময় রাশিয়ান যুদ্ধবিমান কিন্তু ঠিকই আসাদের শত্রুদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিল। অনেক বিশেষজ্ঞ তাই সেই বৈঠককে যুদ্ধের একটি কৌশল বলেই মনে করেন। এমনকি রাশিয়াই বুদ্ধিতেই ওই বৈঠক-বৈঠক খেলা বলে সন্দেহ করেন।
সিএনএন-এ প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে নাথান হজ বলছেন, অনেক সময় যুদ্ধকালে কূটনৈতিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সেই প্রতিশ্রুতি ঝুলিয়ে রেখে সামরিক আক্রমণও চালিয়ে যাওয়া হয়। এটি একটি কৌশল।
গতকাল জানা গেছে, এই বৈঠক থেকে খুব বেশি ইতিবাচক ফল জেলেনস্কি নিজেই আশা করেন না। তবে নাথান হজ মনে করেন, আজ এমন কিছু সিদ্ধান্ত হতে পারে, যাতে রুশ সেনারা ইউক্রেনে ক্রমাগত বাধার মুখে পড়লে এই বৈঠকই পুতিনের জন্য যুদ্ধ গোটাতে উছিলার বীজ হিসেবে কাজ করতে পারে।