সিলেট: সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় নয়ন দেবনাথ (১৮) হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃত দোকান মালিক দুর্জয় দেবনাথ ভৌমিকের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এ রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট রেলওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক জয়নুল আবেদীন এ তথ্য নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের উপমা ফ্যাশন নামক কাপড়ের দোকানের কর্মচারী ছিল নয়ন দেবনাথ। সেই দোকানের মালিক দুর্জয়কে সন্ধিগ্ধ হিসেবে আটক করা হয়। পরে তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করি। শুনানি শেষে বিচারক তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
সিলেট রেলওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলীম শিকদার বাংলানিউজকে বলেন, রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা সন্দেহে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের উপমা ফ্যাশনের মালিক দুর্জয়কে আটকের পর মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। যেহেতু নয়ন দেবনাথ ওই দোকানের কর্মকারী ছিল। আর তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা হত্যার মোটিভ উদঘাটনে অনেকটা দূর এগিয়েছি।
তিনি বলেন, এর আগে রোববার দুপুরে মোমিনছড়া চা বাগানের বাসিন্দা কৃষক লাক্সমি গোয়ালার জমিতে বিচ্ছিন্ন একটি মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে, মাথার খুলিটি নয়ন দেবনাথের কিনা, তা যাচাইয়ে মরদেহ এবং নিহতের পরিবারের ডিএনএ টেস্ট করা হবে।
শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে ফেঞ্চুগঞ্জের মোমিনছড়া চা বাগান এলাকার রেললাইনের পাশ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় নয়নের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। এ ঘটনায় শনিবার নিহতের বাবা দিলীপ চন্দ্র বাদী হয়ে সিলেট রেলওয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
সুরতহাল প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রেলওয়ে পুলিশ জানায়, ধারালে অস্ত্র দিয়ে নয়নের গলাকাটা হয়। মাথা ও বাম হাত খুঁজে পাওয়া যায়নি। ডান হাত ছিল অর্ধমুষ্টি বন্ধ অবস্থায়। বাম হাতের বগল থেকে পেট পর্যন্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা। বুকে থেঁতলানো জখম। পেছনে কোমড়ের ওপরের অংশ কেটে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে এসেছে।
নিহত নয়ন দেবনাথ কুমিল্লা জেলার দৌলতপুর গ্রামের দিলীপ চন্দ্র দেবনাথের ছেলে। তিনি ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের উপমা ফ্যাশন নামে একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারী ছিলেন। এ ঘটনায় দোকান মালিক দুর্জয়কে আটক করা হয়।
নয়নের বাবার অভিযোগ, তার ছেলে ফেঞ্চুগঞ্জ বাজারের উপমা ফ্যাশন নামে একটি কাপড়ের দোকানে কর্মচারী ছিল। সেই দোকানের মালিক দুর্জয় বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়নের মাকে মোবাইলে ফোনকল দিয়ে বলেন, ‘ইদানিং নয়ন অস্বাভাবিক চলাফেরা করছে। ওই রাতে নয়ন একপর্যায়ে তার মাকে মোবাইলে ফোনকল দিয়ে বলে, ‘আমাকে মেরে ফেলবে মা’। তখন নয়নের মা দোকানের মালিক দুর্জয়ের চাচা চন্দন দেবনাথ ভৌমিকের ফোনকল দিয়ে বলেন, ‘অন্তত রাত পর্যন্ত তার ছেলেকে দেখেশুনে রাখতে। ’ এরপর রাত সাড়ে ১০টা থেকে নয়নের ফোন বন্ধ পান তার বাবা-মা। এরপর শুক্রবার দুপুর ২টায় নয়নের মোবাইলে কল দেন তার বাবা-মা। অপরপ্রান্ত থেকে রেলওয়ে পুলিশের একজন সদস্য নয়নের ব্যবহৃত কলটি রিসিভ করে মরদেহ উদ্ধারের খবর দিয়ে সিলেট রেলওয়ে থানায় আসতে বলেন।