গত এক বছরের কিছু বেশি সময় আগে থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ব্যবহার করা হয়েছে ১ হাজার কোটিরও বেশি করোনা টিকার ডোজ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় দৈনিক গালফ নিউজ।
প্রায় ১৩ মাস আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুরু হয় জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি। ব্লুমবার্গের হিসেবে অনুযায়ী, মোট ব্যবহৃত টিকার ডোজ ও বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যার অনুপাত বিচার করলে দেখা যায় বিশ্বের প্রতিটি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ তো পেয়েছেনই, অনেকে পেয়েছেন দ্বিতীয় ডোজও।
বাস্তবতা অবশ্য ভিন্ন কথা বলছে। এক প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পৃথিবীর মুষ্টিমেয় কিছু ধনী দেশ মোট উৎপাদিত টিকার ৭০ শতাংশই নিজেদের দখলে রেখেছে।
ব্লুমবার্গের গবেষণাতেও বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনকে সমর্থন করেছে। ব্লুমাবাগের গবেষণা বলছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশ বসবাস করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ইউরোপে; কিন্তু এ পর্যন্ত মোট উৎপাদিত টিকার ৭১ শতাংশই ব্যবহার হয়েছে এই তিন দেশ ও অঞ্চলে। অন্যদিকে আফ্রিকা ও এশিয়ার অন্যান্য দেশসমূহ, যেখানে বসবাস বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের- ব্যবহার করতে পেরেছে মাত্র ৩০ শতাংশ টিকা। টিকার ডোজ না থাকায় আফ্রিকার অনেক দেশ এখনও টিকাদান কর্মসূচি শুরুই করতে পারেনি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম চীনে শনাক্ত হয় সার্স-কোভ-২, যা পরে পরিচিতি পায় করোনাভাইরাস হিসেবে। অত্যন্ত সংক্রামক এই ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ২০২০ সালের মার্চে করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ডব্লিউএইচও ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহল বরাবরই বলে আসছেন, করোনা মহামারি নির্মূল করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র করোনা টিকা। ডব্লিউএইচও ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বিশ্বের ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে।
তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ধনী দেশগুলো। কারণ টিকা কোম্পানিগুলোতে ডোজের জন্য ধনী দেশগুলো আগাম বুকিং দিয়ে রাখায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাঝারি ও স্বল্প আয়ের দেশসমূহ টিকা কেনার সুযোগই পাচ্ছে না।
ব্লুমবার্গের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রতিদিন বিশ্বজুগে গড়ে ৩ কোটিরও বেশি ডোজ করোনা টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে। যদি এই গতিতে টিকাদান চলতে থাকে এবং টিকা বণ্টনে যদি ন্যূনতম সমতা রক্ষা করা সম্ভব হয় সেক্ষেত্রে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে বিশ্বের ৭৫ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব।