সিএনএম প্রতিনিধিঃ
রাজধানীতে বন্ধুত্ব বা প্রেমের অভিনয় করে কৌশলে ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া। তারপর মারধর করে নারীদের সাথে আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল। চাহিদা মতো টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়ে ছবি-ভিডিও ফুটেজ মুছে ফেলতে আবার ব্ল্যাক মেইল। টাকা না পেলে ছড়িয়ে দেয়া হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এমনই এক চক্রের ৩ নারী সদস্যসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বছর খানেক আগে লামিসা ও সারা নামে ২ জনের সাথে পরিচয় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর। বন্ধুত্বের সম্পর্কে আসে বিশ্বস্ততা। ইফতারের দাওয়াত দিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভুক্তভোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় ফ্ল্যাটে। তারপর আগে থেকেই প্রস্তুত চক্রের পুরুষ সদস্যরা হাজির হয়ে ভুক্তভোগীকে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে মারধর করে। পোশাক খুলে করে ভিডিও। এসময় চক্রের নারী সদস্যরা অভিনয় করে ভুক্তভোগীর।
অসামাজিক কাজের অভিযোগ তুলে চাঁদা দাবি করে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে কয়েক দফায় চক্রটি হাতিয়ে নেয় প্রায় ২ লাখ টাকা। পরে চক্রের হাতে থাকা ছবি ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে আবার দাবি করে পঞ্চাশ হাজার টাকা।
ভুক্তভোগী জানান,’আমি টাকা দিয়ে ৭টার সময় ওখান থেকে বের হই। ওরা আমাকে বলে ভিডিওগুলো ডিলিট করতে হলে আরও টাকা লাগবে। ওরা আমরা কাছে আরও ৮০ হাজার টাকা চায়। আমি অনেক দরকষাকষি করে বললাম আমি ৩০ হাজার টাকা দেই? ওর রাজি হয়, পরে বলে আরও ১০ হাজার টাকা লাগবে।’
ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর রমনা ও খিলগাঁও এলাকা থেকে ৩ নারী সদস্যসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করলেও চক্রের আরো বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (গোয়েন্দা) উপ কমিশনার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন,’চক্রে ছেলে এবং মেয়ে উভয়েই কাজ করে। যখন ভিক্টিম কোন মেয়ের কাছে যায়, তখন সে অভিনয় করে যে সে অন্যদের চিনে না। এরকম তাদের কর্মকাণ্ড এবং অবাক করা বিষয় হলো, চক্রের প্রতিটি সদস্যের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। তারা কোন না কোন কলেজ অথবা ইউনিভার্সিটির ছাত্র অথবা ছাত্রী। তারা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। উচ্চাবিলাসীতা তাদেরকে এ পথে টেনে নিয়ে এসেছে।’
প্রতারক চক্রের প্রায় সবাই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তারা এধরণের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলো বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম আরও বলেন,’এ ক্ষেত্রে ভিকটিমের অবশ্যই দায় আছে। একজন অপরিচিত ব্যক্তির সাথ আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী হলো।। কিন্তু তার সঙ্গে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ হবার আগে আমাকে বিবেচনা করতে হবে, সে কতটুকু বিশ্বস্ত।’
ফাঁদ এড়াতে, লোভে না পড়তে, যেকোন সম্পর্কের বিষয়ে বিস্তারিত জেনে পা দেয়ার পরামর্শ পুলিশের।