সিএনএম ডেস্কঃ
সরকার নারীর ক্ষমতায়ন এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে সম্ভব সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “বাংলাদেশ বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছে।”
তিনি বলেন, “আমার সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কারণে নারীরা কোনো সেক্টরেই পিছিয়ে নেই।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪৩তম জন্ম ও ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বেগম রোকেয়া দিবস ২০২৩’ এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এখানে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বাঙালি নারী শিক্ষার অগ্রদূত এবং সমাজ সংস্কারক বেগম রোকেয়ার অবদানের স্মরণে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম রোকেয়ার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন বাংলাদেশ পূরণ করতে পেরেছে, অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম রোকেয়া যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সে অনুযায়ী নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে তাঁর সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছি, তাদের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
“আমরা সবসময় চেষ্টা করে আসছি, নারীরা যাতে তাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে যা তাদের ক্ষমতায়িত হতে সাহায্য করবে,” যোগ করেন তিনি।
নারীরা বিচারক ও ব্যারিস্টার হবেন রোকেয়ার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারীরা নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে সব সুযোগ কাজে লাগাতে পারায় তার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার আগে দেশে নারীদের বিচারক হওয়ায় আইনী বাধা ছিল। জাতির পিতার উদ্যোগে এই আইনি বাধা উঠে গেলে নিম্ন আদালতে প্রথম নারী বিচারপতি হন নাজমুন আরা সুলতানা।
তিনি বলেন, তার সরকার পরবর্তীতে নাজমুন আরাকে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি একজন নারীকে দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
তিনি বলেন, এখন আমাদের নারীদের বিচরণ সব জায়গায়। যেমন তারা রাজনীতিতেও আছে, অর্থনীতিতে আছে, পররাষ্ট্রনীতিতে আছে, আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ে, সশস্ত্র বাহিনী, সেই সাথে বর্ডার গার্ড সব ক্ষেত্রে কিন্তু নারীদের প্রবেশ সুযোগ আছে এবং তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে।
“সাংবাদিকতা, তথ্য ও প্রযুক্তি, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা সকল ক্ষেত্রে এখন মেয়েরা তাদের দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে, বাংলাদেশের জন্য সুনাম নিয়ে আসছে, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন, এশিয়ার শীর্ষে এখন বাংলাদেশের নারীরা, সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে গর্বের বিষয়। জেন্ডার সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে বাংলাদেশ, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে আজ সপ্তম, আমাদের স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের ৭০ শতাংশ নারী, তৈরি পোশাক শিল্পে ৮০ শতাংশের বেশি নারী কর্মী।
তিনি বলেন, আমাদের দেশটাকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, ২০৪১ সালের মধ্যে এই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। যেখানে নারী পুরুষ সকলকে সমানভাবে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
আমাদের ছেলে মেয়ে উভয়ই যেন সমান ভাবে দক্ষতা অর্জন করতে পারে সেই পরিকল্পনা নিয়েই তাঁর সরকার এগিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আজ তাঁর একমাত্র কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের জন্মদিন হওয়ায় দেশবাসী সকলের কাছে দোয়া প্রত্যাশা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে সমাজ, নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য পাঁচ নারীকে বেগম রোকেয়া পদক-২০২৩ এ ভূষিত করেন।
বেগম রোকেয়া পদক ২০২৩ প্রাপ্তরা হলেন: খালেদা একরাম (মরণোত্তর), ডা. হালিদা হানুম আক্তার, কামরুন্নেসা আশরাফ দিনা (মরণোত্তর), রণিতা বালা এবং নিশাত মজুমদার।
পুরষ্কারপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে একটি করে স্বর্ণপদক, একটি সার্টিফিকেট ও ৪ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এবং সচিব নাজমা মোবারেক।
পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে নিশাত মজুমদার পুরস্কার জয়ে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি চাই নারী স্বাবলম্বী হোক। নারীরা স্বাবলম্বী হলে পরিবার ও সমাজে তার অবস্থান সুদৃঢ় হয়। সব জায়গায় তার কথার মূল্যায়ন হয়।
নিজের মায়ের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা বেশির ভাগ সময় জেলে ছিলেন। সংসার চালানো, দল সুসংগঠিত করাসহ সব কাজই আমার মা করেছেন।
নারী শিক্ষায় বেগম রোকেয়ার অবদান উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের দেশে বাঙালি নারী, বিশেষ করে মুসলিম নারীদের শিক্ষার দ্বার বেগম রোকেয়া উন্মুক্ত করেছিলেন। যে কারণেই হয়তো আজকে আমরা এখানে সমবেত হতে পেরেছি। আমাদের এ উপমহাদেশে নারীরা কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে সবসময় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা নারীদের অবদান দেখেছি। পাকিস্তান আমলে নারীদের অনেক বাধা ছিল। অনেক কর্মক্ষেত্রে নারীদের সুযোগও দেওয়া হতো না। স্বাধীনতার পরে জাতির পিতা কিন্তু সেই সুযোগটা দিয়েছেন। তিনি বাংলার মুক্তির সংগ্রামেও নারীদের অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, বেগম রোকেয়ার আমলে মুসলমান নারীরা ঘরে অবরুদ্ধ থাকতো। তাদের লেখাপড়া করার কোনো সুযোগ ছিল না। তবে বেগম রোকেয়াকে তার স্বামী ও ভাই সবসময় সহযোগিতা করেছেন। তিনি নিজের প্রচেষ্টায় উর্দু, বাংলা, ইংরেজি এবং আরবি ভাষা শিখেছেন।
ইসলাম ধর্ম সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম ধর্মের নাম করে আমাদের মেয়েদেরকে পর্দার আড়ালে রাখার চেষ্টা হোত। আর এখন চিকিৎসা বিজ্ঞান ও সাহিত্যে নারীদের অবদানকে বিশেষভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। সৌদি আরবে ওআইসি সম্মেলনে গিয়ে আমি দেখেছি সেখানে তাদের মেয়েদের বিভিন্ন কর্মস্থলে যারা আছে তাদের ছবি প্রদর্শন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। সৌদি আরবেও নারীদের অধিকার সুনিশ্চিত করা হচ্ছে। তাদেরকে আর পর্দার আড়ালে বন্দি করে রাখা হচ্ছে না। কর্মক্ষেত্রে তাদেরও সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। মেয়েদের অধিকার নিশ্চিত করতে সৌদি আরব এগিয়ে আছে। এখন আর কেউ মেয়েদের পর্দার আড়ালে নিতে পারবে না।
“সুতরাং, ইসলামের নামে কেউ নারীদের ঘরে ফিরিয়ে নিতে পারবে না,” বলেন তিনি।